নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ পাওয়া ৩৮ হাজার ২৮৩ জনকে আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দিতে চায় বেরসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এজন্য দ্রুতগতিতে সুপারিশপত্র তৈরির কাজ করছে এনটিআরসিএ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখে শিক্ষকদের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র দেয়ার নির্দেশনা পাওয়ার পর সুপারিশপত্র তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে টেলিটকের সঙ্গে এক দফায় বৈঠকও হয়েছে। আরেক দফা বৈঠকের পর প্রার্থীদের মুঠোফোনে এসএমএস পাঠানো হবে।
তথ্য অনুযায়ী, এসএমএসপ্রাপ্ত প্রার্থীরা টেলিটকের ওয়েবসাইটে ঢুকে আইডি পাসওয়ার্ড বসিয়ে সুপারিশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। এজন্য একটি লিংকও দেয়া হবে। আজ বৃহস্পতিবার অথবা আগামী সপ্তাহের শুরুতে টেলিটকের সঙ্গে বৈঠক করে এসএমএস পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
এদিকে গত সোমবার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) ফৌজিয়া জাফরীন জানান, একদিকে চলবে পুলিশ ভেরিফিকেশন (প্রশাসনিক যাচাই), অপরদিকে শিক্ষক নিয়োগে দেয়া হবে সুপারিশপত্র। এভাবেই শিক্ষক নিয়োগ চলবে। তবে নিয়োগের পর যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আপত্তিকর কিছু আসে তাহলে তা বাতিল হবে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি বলেন, ‘নিয়োগের পর যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ ভেরিফিকেশনে আপত্তিকর কিছু আসে তবে তার নিয়োগ বাতিল হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ) দেয়া হবে নির্দেশনা।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগে প্রাথমিক সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম চলছে। শিক্ষকদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সময় লাগছে ভেরিফিকেশনে। এ কারণে নেয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম চলমান থাকবে। একই সঙ্গে নিয়োগে সুপারিশপত্রও দেবে এনটিআরসিএ। শিগগির এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্কুল-কলেজগুলোয় অনেক শিক্ষকের পদ ফাঁকা। এ জন্য আমরা পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই তাদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গত পরশু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
কবে নাগাদ নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষকদের নিয়োগের জন্য আমাদের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আশা করি, তারা খুব দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে।’
এনটিআরসিএর তৃতীয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আওতায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৩৮ হাজার ২৮৩ জন প্রার্থীর নিয়োগ পুলিশ ভেরিফিকেশনের কারণে এত দিন আটকে ছিল। উত্তীর্ণ হয়েও চাকরিতে যোগ দিতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাওয়া এসব চাকরিপ্রত্যাশী।
সূত্র জানায়, সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের এ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। এরপর মৌখিক পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় গত বছরের ১৫ জানুয়ারি।
এনটিআরসিএ সূত্র আরও জানায়, ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে স্কুল ও কলেজে শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত বছরের ৩০ মার্চ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। গণবিজ্ঞপ্তির আলোকে ৪ এপ্রিল আবেদন গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় ৩০ এপ্রিল। গত ১৫ জুলাই ৩৮ হাজার ২৮৩টি পদে নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ৬০৭টি এমপিওভুক্ত পদ ও তিন হাজার ৬৭৬টি নন-এমপিও পদে নিবন্ধিত প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।
এর আগে দুটি গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে দুই দফায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এনটিআরসিএ। ওই দুই গণবিজ্ঞপ্তিতে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষক।
তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম যাচাই শেষে ওয়েবসাইটে সুপারিশপত্র প্রকাশ করা হবে। এরপর প্রার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা ২৫ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পূরণ করেন। তবে গত চার মাসেও শেষ হয়নি পুলিশ ভেরিফিকেশন। অবশেষে পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই তাদের নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টি ছিল না। পুলিশ ভেরিফিকেশন না থাকায় প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল এবং দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৫ দিনের মধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়।