শেয়ার বিজ ডেস্ক: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দীর্ঘদিনের আকাক্সিক্ষত নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের মহৎ উদ্যোগকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি নেতারা বিভ্রান্তিকর মন্তব্য ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন। গতকাল গণমাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। সূত্র: বাসস।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি নেতৃবৃন্দসহ একটি চিহ্নিত মহল নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের মহৎ উদ্যোগকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তাদের চিরাচরিত অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের অপরাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছেন। দেশের বিশিষ্টজন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের নির্দেশনা মেনে নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে যেখানে স্বাগত জানিয়েছেন, সেখানে বিএনপি ও তাদের দোসর দেশবিরোধী অপশক্তি দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্য প্রদান করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ, সমাজের বিশিষ্টজন ও সংশ্লিষ্টদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার কর্তৃক নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ এবং এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে এ-সংক্রান্ত খসড়া আইন অনুমোদন পাওয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, সংসদীয় রীতি অনুযায়ী খসড়া আইনটি সংসদে উত্থাপনের পর আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। সেখান থেকে সুপারিশ আকারে সংসদের বৈঠকে উঠবে এবং সংসদীয় বিধান অনুযায়ী সংসদে আলোচনার মধ্য দিয়ে আইনটি চূড়ান্ত হবে। জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল এবং বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা তাদের মতামত ও প্রস্তাব উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন। অথচ গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার না মেনে পূর্বনির্ধারিত দুরভিসন্ধি অনুযায়ী বিএনপি নেতারা এ আইন নিয়ে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রকৃতপক্ষে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল এবং স্বৈরতন্ত্রের গর্ভে জন্ম নেয়া ও ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের আবর্তে পরিচালিত বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান সব সময়ই গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়াবিরোধী। যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল ও গোষ্ঠীস্বার্থ চরিতার্থের অভিপ্রায়ে নির্ণীত হয় বিএনপির রাজনৈতিক গতিপথ। তাই বিএনপি নেতারা নির্বাচন কমিশন-সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে স্বাগত না জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে অপরাজনীতিতে লিপ্ত হয়েছেন।
তিনি বলেন, আইনটি নিয়ে বিএনপি নেতাদের সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় তারা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছেন। কারণ তাদের জন্মই হলো সাংবিধানিক ও প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে চোরাগুপ্তা পথে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে। এ আইন প্রণয়ন নিয়ে কোনো ধরনের লুকোচুরি করা হয়নি। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে এ বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক রীতি ও প্রক্রিয়াকে ভয় পায় বলেই বিএনপি সংলাপে অংশ নেয়নি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একটি নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও শান্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে সব স্টেকহোল্ডার তথা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় ২০১২ ও ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের আলোকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ও মতামত গ্রহণের মাধ্যমে সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। ওই দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নেয়া সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন গঠন আইন প্রণয়নের দাবি জানায়। বিএনপিও তখন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছিল। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সদ্যসমাপ্ত সংলাপে অংশ নেয়া রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে। আওয়ামী লীগও সংলাপে অংশ নিয়ে এই আইন প্রণয়নের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ও সুদৃঢ় ভিত্তি রচনায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও কোনো সরকারই এ আইন প্রণয়নে উদ্যোগ নেয়নি। একমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারই টেকসই গণতন্ত্রের শক্তিশালী কাঠামো বিনির্মাণে নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। গণতন্ত্রের পুষ্পিতপত্র এক দিনে প্রস্ফুটিত হয় না। সুনিবিড়ি পরিচর্যা ও অনুশীলনের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। তবে পরিতাপের বিষয় এখনও গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তি ছদ্মবেশে গণতন্ত্রের পিঠে ছুরিকাঘাত করে চলেছে।
কাদের বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন আইন নিয়ে যে খসড়া অনুমোদিত হয়েছে, সে সম্পর্কে গঠনমূলক আলোচনা ও দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান তিনি।
