অস্ট্রেলিয়া থেকে জাপানে যাবে বিশ্বের প্রথম হাইড্রোজেনবাহী জাহাজ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথ উদ্যোগে বাদামি কয়লা থেকে হাইড্রোজেন উৎপন্ন করা হচ্ছে। এ হাইড্রোজেন এখন অস্ট্রেলিয়া থেকে জাপানে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ্বের প্রথম হাইড্রোজেনবাহী জাহাজ হবে এটি। গত বছর শুরুর দিকে এ জাহাজের হাইড্রোজেন জাপানে খালাস করার কথা ছিল। তবে কভিডের কারণে এক বছর বিলম্ব হয়েছে। খবর: আরব নিউজ।

মাইনাস ২৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় (মাইনাস ৪২৩ ফারেনহাইট) ঠাণ্ডা করা হয় হাইড্রোজেন। এরপর তা রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়।

জাহাজটির নাম সুইসো ফ্রন্টিয়ার। এটি নির্মাণ করেছে জাপানের কাওয়াসাকি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ (কেএইচআই)। চলতি সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার পৌঁছেছে এটি। জাপানের কোবে বন্দর থেকে ১৬ দিন আগে রওয়ানা দেয় সুইসো ফ্রন্টিয়ার। বৈরী আবহাওয়া ও উত্তাল সমুদ্রের কারণে দীর্ঘ সময় পর অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছায় জাহাজটি।

হাইড্রোজেন এনার্জি সাপ্লাই চেইন (এইচইএসসি) নামের এ প্রকল্প শুরু করেছে অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। এ প্রকল্পের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, সপ্তাহখানেকের মধ্যে জাহাজটি হাইড্রোজেন নিয়ে জাপানে ফিরে আসবে।

কেএইচআইয়ের সহায়তায় এইচইএসসি ৩৬ কোটি ডলার ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পে সহায়তা করছে জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও কার্বন নিঃসরণ কমাতে এ ধরনের জ্বালানি নির্মাণ করছে দেশ দুটি।

২০৫০ সালের মধ্যে দেশ থেকে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে জাপানের। এজন্য কয়লা, গ্যাস ও তেলের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আনছে দেশটি। অন্যদিকে, এ সময়ের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের বৃহত্তম হাইড্রোজেন রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়ে চায়।

অস্ট্রেলিয়া সরকার গত শুক্রবার আরও অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সব অর্থ এইচইএসসি প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। কয়লা থেকে হাইড্রোজেন প্রস্তুতকরণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রকল্পে বাড়তি ২০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার ব্যয় করার অঙ্গীকারও দিয়েছে দেশটি।

গত বছর এইচইএসসি অস্ট্রেলিয়ার লাট্রব উপত্যকায় দিনে ৭০ কেজি হাইড্রোজেন প্রস্তুত করার উদ্যোগ নেয়। মেলবোর্ন থেকে এ উপত্যকা ১৩৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এখানে বাদামি কয়লার খনি রয়েছে। স্থানটিতে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে দূষিত জ্বালানি স্টেশনগুলো রয়েছে।

কয়লার সঙ্গে অক্সিজেন ও স্টিমে অত্যধিক তাপ ও চাপ দিয়ে হাইড্রোজেন প্রস্তুত করা হয়। নবায়নযোগ্য ও পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে পানি থেকে হাইড্রোজেন আলাদা করা হয়। এ প্রক্রিয়াটি বেশ ব্যয়বহুল, তবে এর খরচ দিন দিন কমে আসছে। এরপর এ পদার্থ ট্রাকে করে বিশেষ একটি স্থানে নেয়া হয়, যেখানে ২৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখার পর রপ্তানির জন্য রাখা হয়। অংশীদারী দুই দেশ এভাবে বছরে দুই লাখ ২৫ হাজার টন হাইড্রোজেন উৎপন্নের পরিকল্পনা করছে।

এইচইএসসি প্রকল্পের অন্যতম অংশীদার জে-পাওয়ারের জেরেমি স্টোন বলেন, ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ প্রকল্পে কাজ করবে অস্ট্রেলিয়া। এরপর প্রকল্পে বিনিয়োগের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবে দেশটি। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পাশাপাশি অন্য দেশ থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানো হাইড্রোজেন আমদানি বা রপ্তানি করবে।

এ প্রকল্পে অংশীদারিত্ব রয়েছে জাপানের ইলেকট্রিক পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কো., ইয়াতানি কর্প, মারুবেনি কর্প, সুুমিটোমো গ্রুপ ও অস্ট্রেলিয়ার এজিএল এনার্জি লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানগুলো বাদামি কয়লা সরবরাহ করে।

তেল-কয়লার মতো জ্বালানির প্রধান উৎস নয় হাইড্রোজেন। এটি মূলত শক্তিবাহক, অনেকটা বিদ্যুতের মতো। ব্যাটারির মতো সংরক্ষণের মাধ্যম। একে উৎপাদন করতে হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এ ধরনের জ্বালানি ১০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে পারবে।

সত্তরের দশকে শুরু হয় হাইড্রোজেন জ্বালানি প্রস্তুতকরণ। বিশ্বের অনেক দেশ দিন দিন এ জ্বালানি তৈরি ঝুঁকছে। ৩৫০টির বেশি প্রকল্প চলমান রয়েছে হাইড্রোজেন নিয়ে। ২০৩০ সাল নাগাদ এই গ্যাসের পেছনে সর্বমোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মহাবিশ্বে হাইড্রোজেনের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। পরিবেশের জন্য হাইড্রোজেন ক্ষতিকরও নয়। তাই সম্প্রতি বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির সঙ্গে জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেনের কদর বাড়ছে। ট্রাক ও বাণিজ্যিক যানবাহন উৎপাদকরা হাইড্রোজেন জ্বালানি কোষ ব্যবহারে আগ্রহ প্রকশ করেছে। এছাড়া উড়োজাহাজ, রেলগাড়ি ও অন্যান্য যাত্রীবাহী গাড়ির উৎপাদকরাও হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০