নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে ভয়াবহ আকারে ধারণ করা চিকুনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ রোধে অভিযান শুরু হয়েছে। এ রোগের বাহক এডিস মশার প্রসার ও প্রজনন ঠেকাতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে ১০ হাজার সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের। জনসচেতনতা বাড়াতে রাজধানীর ৯২টি পয়েন্টে প্রচারণা চালিয়েছেন তারা।
গতকাল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে শিক্ষার্থীরা চিকুনগুনিয়া রোগ প্রতিরোধে মহানগরীতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, সব ধরনের প্যারামেডিক্যাল ইনস্টিটিউট ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ম্যাটস্) এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে অংশ নেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা ঈদের ছুটি কাটাতে বাড়ি যাওয়া বিলম্ব করে কর্মসূচিতে অংশ নেন। চিকুনগুনিয়া জ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে এবং এ রোগ নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে মাঠপর্যায়ে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা ঢাকার ৯২টি এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে অভিযান চালান। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলে বেলা ২টা পর্যন্ত।
দেশে বেশ কিছুদিন ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে চিকুনগুনিয়া জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, চিকুনগুনিয়া নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এ জ্বরে মৃত্যুঝুঁকিও নেই। তারপরও রোগটি নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সকালে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এ সময়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাহউদ্দিন, বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর গত ১ থেকে ৫ জুন মহানগরীর ৪৭টি ওয়ার্ডে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র বিষয়ে একটি জরিপ চালায়। জরিপে দেখা যায়, ২৩টি ওয়ার্ডে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক উঁচু মাত্রায় এডিস মশা রয়েছে। ব্রুটো ইনডেক্স ২০ হলো স্বাভাবিক মাত্রা। কিন্তু ৪৭টি ওয়ার্ডের গড় ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া যায় ৫২, যা স্বাভাবিকের চেয়েও দুই গুণেরও বেশি। কোনো কোনো এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ১৩৩। যেমন ধানমন্ডি, কলাবাগান ও কাঁঠালবাগান।
অভিযানকালে নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত ও ধ্বংস, মোটরযান মেরামতের দোকানগুলোতে গিয়ে পুরোনো টায়ার থেকে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস এবং সেগুলোতে যাতে পানি জমতে না পারে সেজন্য পুরোনো টায়ারগুলো ফুটো করা, আবর্জনার ভাগাড়গুলোতে মশা প্রজনন স্থল, যেমন পরিত্যক্ত ডাবের খোসা অপসারণ এবং বাসাবাড়ির ভেতর এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিত করে ধ্বংস করা হয়। একই সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সচেতন করা ও চিকুনগুনিয়া রোগের জরিপ করার উদ্দেশে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
Add Comment