বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, দেশে ব্যবসায় প্রধান বাধা দুর্নীতি, অদক্ষ আমলাতন্ত্র ও ঋণস্বল্পতা। মহামারি কভিডের অভিঘাতের পর ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরুদ্ধার হতে শুরু করেছে। তবে এ পুনরুদ্ধার হচ্ছে অসমগতিতে। সিপিডির এ গবেষণা জরিপে অংশ নেয়া ৬৮ শতাংশ উদ্যোক্তাই ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
সিপিডি গত বছরের এপ্রিল, জুন ও জুলাই সময়পর্বে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ফরিদপুরের ৭৩টি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের ওপর এ জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুর্নীতিই তাদের বড় প্রতিবন্ধকতা। বড় ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী বলে আমলারা তাদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারেন কম। কিন্তু দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ব্যবসায়ী। তাদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রকে সক্রিয় হতে হবে।
ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়হীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ব্যবসার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হয়। কোনো জায়গায় যেন ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ব্যবসার পরিবেশ ভালো করতে সব মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করতে পারে। ওই টাস্কফোর্সে সব বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের রাখলে তারা কী সমস্যার মুখোমুখি হন, সে বিষয় উঠে আসবে।
ব্যবসার পরিবেশ সূচকে আমাদের অবস্থান সুবিধার নয়। মনে রাখতে হবে, দেশে ব্যবসার পরিবেশ সুন্দর থাকলেই ব্যবসায়ীরা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন। ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা অনেক প্রতিকূল অবস্থার শিকার হন। নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসপ্রাপ্তি, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণপ্রাপ্তি, কর পরিশোধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সময় আগের চেয়ে কম লাগলেও তা প্রত্যাশিত মানে আসেনি। ব্যবসার বাণিজ্যিক বিরোধ মেটাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় উদ্যোক্তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। তারা সময়মতো উৎপাদনে যেতে পারেন না, জাহাজীকরণ করতে পারেন না। ফলে ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। ঋণ পাওয়ার সূচকে অগ্রগতি হলেও ব্যবসা সহজীকরণে আগে পরিকল্পিতভাবে কাজ হয়নি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সূচকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যাগুলো শনাক্ত করা হলেও তা ব্যবসায়ীদের সমাধান করতে হয়। নীতিনির্ধারকেরা দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে থাকেন। আমরা সেভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা সমাধান করতে পারিনি। মনে রাখতে হবে, বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধান করলেই প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে বিদেশীদের আগ্রহী করা যাবে। অন্যথায় অন্য দেশে চলে যাবেন তারা। সব দেশই এখন বিনিয়োগের জন্য উš§ুক্ত। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ীরাও যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। প্রয়োজনে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, দুর্নীতি, অনৈতিক লেনদেন, পরিবহন খরচসহ যেসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ আছে, সেগুলো নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।