মো. রুবাইয়াদ ইসলাম, হাবিপ্রবি (দিনাজপুর): দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং প্রতিরোধ এবং প্রতিকার করার লক্ষ্যে ‘হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা ২০২১’ শিরোনামে ৯টি ধারা-সংবলিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। নীতিমালাটির প্রথম ধারায় শিরোনাম উল্লেখ করে পরের ধারায় ‘প্রয়োগ ও প্রবর্তন’ প্রণয়ন করার মাধ্যমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের র্যাগিং থেকে বিরত রাখার বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং নীতিমালা অনুযায়ী কেউ র্যাগিংয়ে লিপ্ত হলে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করা হয়।
নীতিমালায় শিক্ষার্থী, র্যাগিং, এন্টি র্যাগিং স্কোয়াড, কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, অভিভাবক, কমিউনিটি, শাস্তি এসবের সংজ্ঞা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এছাড়াও উল্লেখ করা হয়, কাউকে উদ্দেশ্য করে এমন কিছু বলা বা লেখা যাবে না, যা খারাপ কোন কিছুর প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন করা বা ডাকা, অশালীন শব্দ ব্যবহার করা, গালিগালাজ করা, হুমকি দেয়া প্রভৃতিকে মৌখিক র্যাগিং হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে নীতিমালাটিতে। কাউকে কোন কিছু দিয়ে আঘাত করা, চড়-থাপ্পড় মারা, লাথি মারা, ধাক্কা মারা, খোঁচা দেয়া, থুথু দেয়া, বেঁধে রাখা, কোনো বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বা বসিয়ে বা বিশেষ অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেয়া অথবা বাধ্য করা, কারও কোনো জিনিপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা, মুখ দিয়ে অশালীন বা অসৌজন্যমূলক অঙ্গভঙ্গি প্রকাশ করাকে শারীরিক র্যাগিং বলা হয়েছে। সামাজিক মর্যাদা, একক বা দলগত বন্ধুত্ব বা পারস্পরিক সম্পর্ক, ধর্মীয় পরিচিতি বা বংশগত অহঙ্কারবোধ থেকে কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা বা তা করতে প্ররোচিত করা ছাড়াও কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে বারণ করা, কারও সম্পর্কে গুজব ছড়ানো, প্রকাশ্যে কাউকে অপমান করা, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র বা জাত তুলে কোনো কথা বলা প্রভৃতিকে সামাজিক র্যাগিং বলা হয়েছে। নীতিমালাটিতে সাইবার র্যাগিং, সেক্সুয়াল র্যাগিং ও জাতিগত র্যাগিং সম্পর্কেও বলা হয়েছে।
নীতিমালা থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে, আবাসিক হলগুলোয় কোনো ধরনের র্যাগিংয়ের ঘটনা সংগঠিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখবে এবং বিষয়টি লিপিবদ্ধ করবে। এ ক্ষেত্রে ঘটনা সংঘটনের ধরন ও স্থান বিবেচনায় নিয়ে ‘এন্টি র্যাগিং স্কোয়াড অব হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের মূল কমিটি সংশ্লিষ্ট উপকমিটিকে দায়িত্ব প্রদান করবে। কমিটি তা যথার্থ প্রক্রিয়ায় তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করলে সে অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, র্যাগিং প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারকে আহ্বায়ক করে এন্টি র্যাগিং স্কোয়াডের মূল কমিটি গঠন করা হয়েছে। মূল কমিটিতে আরও থাকবেন আহ্বায়ক (ডিন কাউন্সিল), আহ্বায়ক (হল সুপার কাউন্সিল), প্ররক্ষক, পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ), সব সহকারী প্ররক্ষক এবং সব সহকারী পরিচালক (ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ)। এছাড়াও অনুষদওয়ারী ও আবাসিক হলসহ (হল ও মেস) আরও কয়েকটি উপকমিটি গঠন করা হবে।
হাবিপ্রবির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী যেন র্যাগিং নামক অপসংস্কৃতির শিকার হয়ে তার শিক্ষা জীবনে প্রতিবন্ধিকতার মুখে না পড়ে, যেন ঝরে না পড়ে আজন্ম লালিত কোন স্বপ্ন; সে জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের র্যাগিং থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাই। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যদি র্যাগিংয়ের অভিযোগ ওঠে এবং তা প্রমাণিত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেয়া হবে। এমনকি সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান ছাত্রত্ব বাতিল পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাই সবাইকে র্যাগিং থেকে বিরত থাকার জন্য আবারও জোর আহ্বান জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. ইয়াছিন প্রধান বলেন, ক্যাম্পাসে র্যাগিং বন্ধে প্রক্টোরিয়াল বডি সবসময় তৎপর রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ক্যাম্পাসে প্রচারণা করা হবে। র্যাগিং বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে সচেতনতামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ যদি কারো দ্বারা র্যাগিংয়ের শিকার হয়, তাহলে প্ররক্ষক অফিসে অভিযোগ করতে পারবে এবং যদি সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি বহিষ্কার করাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।