শেয়ার বিজ ডেস্ক: ক্লেস্ট্রা হাউসম্যান গ্রুপের অফিস চালু হয়েছে সৌদি আরব, কুয়েত ও ওমানে। ফ্রান্সের এই নির্মাণ সংস্থা গত মঙ্গলবার আঞ্চলিক সদর দপ্তর খুলেছে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে। এজন্য সৌদি আবাসন প্রতিষ্ঠান জুহায়ের আল-হাবিব গ্রুপের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্ব চুক্তি করেছে ক্লেস্ট্রা হাউসম্যান। খবর: আরব নিউজ।
চুক্তির আওতায় সমান মুনাফা পাবে আল-হাবিব ও ক্লেস্ট্রা হাউসম্যান গ্রুপ। পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্বে খ্যাতি রয়েছে ক্লেস্ট্রার। এ বিষয়টি নজর কাড়ে সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের। রিয়াদ স্ট্রাটেজি ২০৩০ পরিকল্পনা ঘোষণার এক বছরের মাথায় তিনি ফ্রান্সের এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেন।
‘সৌদি আরব আমাদের বৃহত্তম বাজার। আশাকরি এক বছরের মধ্যে আমাদের ব্যবসার ৮০ শতাংশ মুনাফা এখান থেকে আসবে,’ বলেন ক্লেস্ট্রা হাউসম্যানের মধ্যপ্রাচ্যের পরিচালক ফরিদ হাব্বাস। আরব নিউজকে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে ফার্ম চালু করতে পেরে ভীষণ আনন্দিত। এখন থেকে স্থানীয় অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখতে পারব। এর মধ্য দিয়ে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবো এবং অনেক কর্মসংস্থান করতে পারব।’
মধ্যপ্রাচ্যে ক্লেস্ট্রার যাত্রা হয় দুবাইয়ে। দীর্ঘদিন ধরে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বলে পরিচিত ছিল এ অঞ্চলে। রিয়াদে সদর দপ্তর চালু হওয়ার পর দুবাইয়ের ৪০টি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান তাদের শাখা খুলবে রিয়াদে। এ পরিকল্পনার আওতায় সরকার ও রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২৪ সালের পর সৌদি আরবে আঞ্চলিক সদর দপ্তর না খুললে তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে না। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থাৎ আঞ্চলিক সদর দপ্তর খোলা হলে বিশ্বে বৃহৎ ১০ অর্থনীতির একটি শহরে পরিণত হবে রিয়াদ।
১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্লেস্ট্রা হাউসম্যান। মধ্যপ্রাচ্যে ৪০ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরামকোর সঙ্গে ১৯৭০ সাল থেকে কাজ করছে ক্লেস্ট্রা। মধ্যপ্রাচ্যে কয়েকটি বিমানবন্দর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও করপোরেট অফিসের পার্টিশন বা অস্থায়ী দেয়াল ও নকশার মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি পাকাপোক্ত করে ক্লেস্ট্রা। এর সবই পরিচালিত হতো দুবাই থেকে। বর্তমানে দুবাইয়ের পাশাপাশি এর অফিস রয়েছে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত ও ওমানে।
‘ক্লেস্ট্রায় আমরা ক্রেতার সর্বোচ্চ মানের সেবা নিশ্চিত করে থাকি। ভবন নির্মাণের পর ক্রেতাদের পার্টিশন, নকশা প্রভৃতির রক্ষণাবেক্ষণ ও বিক্রয় পরবর্তী সেবা দিয়ে থাকি। এমনকি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা তাদের সমস্যার সমধান করে থাকি,’ বলেন হাব্বাস। তার মতে, ক্লেস্ট্রার পণ্যের অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে, সহজে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে বহন করা যায়। ক্রেতা চাইলে নতুন কিছু যোগ করতে পারেন কিংবা সরাতে পারেন। তাদের সব পণ্য সহজে লাগানো (ফিক্সড), সরানো যায় (সøাইডিং) বা গোটানো যায় (ফোল্ডিং)। তাদের পণ্যগুলো অফিসে আড়াল সৃষ্টির পাশাপাশি এনে দেয় শৈল্পিক মাত্রা।
হাব্বাস বলেন, ‘আমরা পণ্য বিক্রি করি না, আমরা সমস্যার সমাধান করে থাকি। আমাদের ধারণা সৌদি আরবে এখন এ ধরনের পণ্য ও সেবা দরকার। ক্রেতাদের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আমরা বিশ্বব্যাপী ইস্পাত, কাচ, কাঠ বা যৌগিক উপাদান দিয়ে পণ্য তৈরি করি। আমাদের সব পণ্য অ্যাকুস্টিক ও আগুন নিরোধক।’
একটি ভবনের সবুজ বা স্থায়িত্বের মাত্রা পরিমাপ করতে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন রেটিং সিস্টেম তৈরি করেছে। বিল্ডিং রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্ট এনভায়রনমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট মেথডোলজি (বিআরইইএএম) হলো বিশ্বের প্রথম গ্রিন বিল্ডিং রেটিং সিস্টেম। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (এলইইডি) ও ফ্রান্সের পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ সার্টিফিকেশন (এইচকিউই) থেকে অনুমোদন পেয়েছে ক্লেস্ট্রা। সৌদি আরবের উৎপাদন ও নির্মাণ শিল্পের প্রসারে সম্পদের ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক পরিবেশগত জ্ঞান কাজে লাগাচ্ছে ক্লেস্ট্রা।
কিং সৌদ ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পার্টিশন রয়েছে, যা তৈরি করেছে ক্লেস্ট্রা। এখানে কাঠের পাশাপাশি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়েছে। রিয়াদে অনেক নতুন কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
তাদের নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ করা হবে, যেখানে প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দেয়া হবে।
রয়েল কমিশন ফর রিয়াদ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ আল-রশীদ বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে রিয়াদে চালু হওয়া সব আঞ্চলিক সদর দপ্তর আমাদের (সৌদি আরব) অর্থনীতিতে ১৮ হাজার কোটি ডলার যুক্ত করবে এবং ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
