নিজস্ব প্রতিবেদক: তারকাদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সাধারণ মানুষেরও আগ্রহের কেন্দ্রে চলে আসে এবারের নির্বাচন। গত শুক্রবার সারা দিন নির্বাচন ও গতকাল ভোররাত সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভোট গণনা শেষে এগিয়ে থেকে আগামী দুই বছরের জন্য সভাপতি হিসেবে ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জায়েদ খান নির্বাচিত হয়েছেন।
গত শুক্রবার উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। এদিন তারকাদের একনজর দেখার জন্য এফডিসির প্রধান ফটকে সকাল থেকে ছিল ভিড়। ভিড় গিয়ে ঠেকে এফডিসির সামনের উড়াল সড়কের কাছে। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষকে দেখা যায় এফডিসির সামনে দিনভর দাঁড়িয়ে থাকতে। সারা দিনের এমন উৎসবমুখর পরিবেশের পর জানা গেল বিজয়ীদের নাম।
গতকাল ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহীদুল হারুন। ইলিয়াস কাঞ্চন ও জায়েদ খান ভোট পেয়েছেন যথাক্রমে ১৯১ ও ১৭৬টি। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতি পদে মিশা সওদাগর ১৪৮টি ভোট পেয়েছেন। আর নিপুন ১৬৩টি ভোট। এ ছাড়া অন্যান্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন সহসভাপতি ডিপজল ও রুবেল। সহসাধারণ সম্পাদক পদে সাইমন সাদিক জয়ী হয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন অভিনেত্রী শাহানূর। সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে মামনুন ইমন জয়ী হয়েছেন। আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন জয় চৌধুরী। দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন আরমান।
এছাড়া কার্যকরী সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে অঞ্জনা, রোজিনা, অরুণা বিশ্বাস, সুচরিতা, আলীরাজ, মৌসুমী, চুন্নু আর কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের ফেরদৌস, কেয়া, জেসমিন ও অমিত হাসান।
শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচন নিয়ে ছিল শঙ্কাও। তাই কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল এ নির্বাচন ঘিরে। দিনব্যাপী এফডিসিতে অনুষ্ঠেয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোট ঘিরে ছিল চাপা উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ; ছিল উৎসব-উৎকণ্ঠাও। শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুন্দরভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে নির্বাচনের দিন প্রথম এফডিসিতে পা রাখেন চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক। ধীরে ধীরে তারকাদের আনাগোনায় মুখর হতে থাকে বিএফডিসির আঙিনা। তবে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী এবং তারকা ভোটাররা মিস করেছেন তাদের অনেক তারকাবন্ধু, সহকর্মী ও প্রিয়জনকে। কেউ ছিলেন দেশের বাইরে, কেউবা দেশে থাকলেও কভিডের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভোট দিতে আসেননি।
অন্যদিকে, ডলি জহুরের মতো অভিনয়শিল্পী জানালেন, শিল্পী সমিতির ভোট দিতেই তিনি দেশের বাইরে থেকে এসেছেন। ডলি জহুর ভোট দিতে এসেছিলেন শর্মিলী আহমেদ ও দিলারা জামানকে নিয়ে। এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছিলেন জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী মিরানা জামানও।
বছরের অন্যান্য সময়ে চলচ্চিত্রের যেসব তারকাকে এফডিসিতে আসতে দেখা যায় না, তারাও এই দিনে একবার আসেন। দীর্ঘদিন যেসব শিল্পীর সঙ্গে দেখা হয় না, তাদের সঙ্গে আড্ডা দেন। কথা বলেন। ভালোমন্দ জানার চেষ্টা করেন।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচনে ভোটের কয়েক দিন আগে থেকে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ ও মিশা-জায়েদ প্যানেলের মধ্যে যে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, ভোটের দিন সেই উত্তেজনা অনেক কম ছিল। তবে নিয়ম ভাঙার অভিযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্যানেলের মধ্যে ছিল পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। দুপুরের বিরতির আগে হঠাৎ নিপুণ তার বিরোধী প্যানেলের জায়েদ খানের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট সংগ্রহের অভিযোগ করেন। এরপর জায়েদও জানান, নিপুণের প্যানেলের একজন প্রার্থী টাকা দিয়ে ভোট সংগ্রহ করছেন। তবে সেই সময় কিছুটা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিপুণ বিষয়টি একাধিকবার নির্বাচন কমিশনের নজরে আনলে তারা লোক পাঠিয়ে সেখান থেকে দুই প্যানেলের প্রার্থীদের সরিয়ে দেন।
অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের নির্বাচন ছিল অনেকটাই ব্যতিক্রম। ভেতরে প্রবেশ ছিল বেশ কড়াকড়ি। এ কারণে এফিডিসির বাইরে যতটা না জটলা ছিল, তার চেয়ে বেশ জটলামুক্ত ছিল ভেতরের পরিবেশ। এ কারণে তারকা শিল্পীরা অনেকটাই নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
ভোট দিতে এসেছিলেন আনোয়ারা, জাহিদ হাসান, আসাদুজ্জামান নূর, নূতন, শহীদুজ্জামান সেলিম, আমিন খান, অপু বিশ্বাস, বিদ্যা সিনহা মিম, ববি, বাপ্পী, মুক্তি, সিমলা, দীঘি প্রমুখ।
সকাল ৯টায় ভোট গ্রহণ শুরু হলেও বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢিলেঢালা ভোট চলে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এফিডিসির বাগান ও ১ নম্বর ফ্লোরের পাশের রাস্তা দিয়ে লাইন ধরে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে ভোট দেন ভোটার। ভোটদান শেষ হয় বিকেল পাঁচটার পর। ৪২৮ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দেন ৩৬৫ জন।
