অর্থবছর ২০২০-২১

পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশি জাহাজ মালিকদের আয় ৩,১১০ কোটি টাকা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: প্রতিবছর সমুদ্রে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। এসব জাহাজে বেড়েছে কার্গো, পাথর, চিনি, সয়াবিন বীজ, জ্বালানি তেল ও এলপি গ্যাস পরিবহন। এতে জাহাজ পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর ২০২০-২১ অর্থবছরে জাহাজ ভাড়া থেকে আয় হয়েছে তিন হাজার ১১০ কোটি টাকা (৩৬ কোটি মার্কিন ডলার)। চলতি অর্থবছরে এ খাতে আরও বেশি হবে।

জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী রাষ্ট্রীয় জাহাজ সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মোট আয় ৩২২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে পরিচালন আয় ২৭৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা, অন্যান্য খাতে আয় ৪৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অন্যদিকে পরিচালন ব্যয় ১৬০ কোটি ২২ লাখ এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতে ব্যয় ৬৭ কোটি ৫ লাখ। অর্থাৎ মোট ব্যয় ছিল ২২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এতে নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭২ কোটি দুই লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৩০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বেশি। এর আগের বছর কর সমন্বয়ের পর নিট মুনাফা ছিল ৪১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। মূলত ছয়টি নতুন জাহাজ বহরের যুক্ত হওয়া এবং জাহাজ ভাড়া বাড়ায় মুনাফায় বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে বেসরকারি খাতের শিপিং কোম্পানিগুলো ব্যবসায়িকভাবে আরও বেশি সফল হয়েছে। সবমিলিয়ে শিপিং কোম্পানিগুলো ২০২০-২১ অর্থবছরে জাহাজ ভাড়াবাবদ আয় করেছে তিন হাজার ১১০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে ভাড়া বাবদ বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে ৩৩৬ কোটি ডলার বা সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির হিসাবে জাহাজ ভাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এখন এই ব্যয়ের পরিমাণ তিনগুণ দাঁড়াবে। আর দেশীয় জাহাজের সংখ্যা বাড়লে দুই থেকে ৩০০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব হবে।

নৌবাণিজ্য দপ্তরের সূত্র মতে, বাংলাদেশে নিবন্ধিত সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ৮০টি। তার মধ্যে বহরের ২৩টি জাহাজ নিয়ে শীর্ষে আছে চট্টগ্রামের কবির গ্রুপ। আর মেঘনা গ্রুপের ১৫টি, আকিজ গ্রুপের ১০টি, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ৮টি, কর্ণফুলী লিমিটেডের ছয়টি, বসুন্ধরা ও বিএসএ গ্রুপের পাঁচটি এবং ক্রাউন সিমেন্টের তিনটি জাহাজ রয়েছে। এ ছাড়া একটি-দুটি করে আরও পাঁচটি জাহাজ রয়েছে।

শিপিং ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে ভোগ্যপণ্য ও উৎপাদনমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে বড় শিল্প গোষ্ঠীগুলোর জাহাজ প্রয়োজন হয়। কোম্পানিগুলো নিজেরাই জাহাজ আমদানি করছে। বাংলাদেশের সেই সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। শুধু ২০২১ সালে নামিয়েছেন ১৮টি, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আরও নীতি সহায়তা পেলে এ খাতে আরও বিনিয়োগ আসবে। বর্তমানে এ খাতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে।

এ বিষয়ে নৌবাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, সমুদ্রে পণ্য পরিবহনে আমাদের অনেক সম্ভাবনা আছে। এ খাতের বিপুল পরিমাণে অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। আমাদের বিএসসির পাশাপাশি দেশীয় শিল্প গ্রুপ কবির গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা, আকিজ, বসুন্ধরা, কর্ণফুলীসহ কয়েকটি গ্রুপ এ খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। ২০২১ সালে মোট ১৮টি জাহাজ যুক্ত হয়েছে। আরও কয়েকটি জাহাজ যুক্ত হবে। সবমিলিয়ে এখন ৮০টি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ বহরের যুক্ত হয়েছে। তবে এসব জাহাজ তাদের নিজস্ব পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত। আমরা বাংলাদেশে মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্সের কিছু অংশ সংশোধনের জন্য কাজ করছি, এটি হলে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের তালিকা আরও বড় হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর সুমন মাহমুদ সাব্বির শেয়ার বিজকে বলেন, বিএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এ প্রতিষ্ঠানে দেশের বর্তমান চাহিদা বিবেচনায় বিভিন্ন ধরন ও সাইজের ৪০-৫০টি জাহাজ থাকা উচিত। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূল কারণে বিশেষ করে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতে না পারায় সে পরিমাণ জাহাজ করপোরেশনের বহরে সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমান সরকারের নির্দেশনা ও সক্রিয় সহযোগিতায় এ সংস্থা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ, দেশের অর্থনীতির প্রাণখ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতি বছরই বাড়ছে পণ্যবাহী জাহাজ হ্যান্ডলিং। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের চার হাজার ৬২টি জাহাজ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের তিন হাজার ৭৬৪টি জাহাজে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তিন হাজার ৬৯৯টি সমুদ্রগামী জাহাজে এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তিন হাজার ৬৬৪টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের ভিড়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০