গ্রাহকের সই জাল করে পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক এভিপির বিরুদ্ধে চার্জশিট

নজরুল ইসলাম: গ্রাহকের সই জাল করে কৌশলে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় এক সাবেক ব্যাংক ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২৫ জানুয়ারি চার্জশিটটি দাখিল করা হয়। দুদকের উপপরিচালক মো. শফি উল্লাহ এটি দাখিল করেন। এর আগে ৫ জানুয়ারি এটি অনুমোদিত হয়। দুদক সূত্র শেয়ার বিজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

২০১৯ সালে টাকা হাতিয়ে নেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বনানী শাখার প্রিভিলেজ সেন্টারের সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জাহিদ সারোয়ার। তিনি এজন্য সহায়তা নেন তার স্ত্রীর। ওই বছর ১৫ ডিসেম্বর দুদকের ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা দায়ের করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপপরিচালক) মো. শফি উল্লাহ।

মামলায় আসামি করা হয় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বনানী শাখার প্রিভিলেজ সেন্টারের সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট জাহিদ সারোয়ার ও তার স্ত্রী ফারহানা হাবিবকে।

চার্জশিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের তথ্য অনুযায়ী, আসামি জাহিদ সারোয়ার ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর আমিরাত এয়ারলাইনসের একটি বিমানযোগে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারার অপরাধ বিচারের জন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের গ্রাহক ফেরদৌসী জামানের সই জাল করে ব্যাংকের নথিতে থাকা গ্রাহকের মোবাইল ফোন নম্বর পরিবর্তন করে নিজের একটি নম্বর যুক্ত করেন জাহিদ সারোয়ার। ওই নম্বর ব্যবহার করে ফেরদৌসী জামানের সই জাল করে চারটি চেকবই সংগ্রহ করেন জাহিদ। এর মধ্যে তিনটি চেকবই গ্রাহককে না দিয়ে তিনি নিজে রেখে দেন। ওই তিনটি চেকবইয়ের ৬০টি পাতায় হিসাবধারী ফেরদৌসী জামানের স্বাক্ষর এবং ১৬টি পাতায় গ্রাহকের বেয়ারার মো. ইশতিয়াক হোসেন তালুকদারের সই জাল করে চার কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলে নেন। পরে ওই টাকার মধ্যে দুই কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্র্যাক ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখায় তার স্ত্রী ফারহানা হাবিবের মালিকানাধীন আশা ক্রিয়েশনের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবে জমা করেন।

এজাহারে দুদক বলেছে, ফারহানা হাবিব তার স্বামী জাহিদ সারোয়ারের অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা নিজের মালিকানাধীন আশা ক্রিয়েশনের হিসাবে জমা দেয়ায় সহযোগিতা এবং ওই টাকা তুলে নিয়ে পাচারে সহায়তা করেছেন। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

চার্জশিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই হিসাব নম্বরে টাকা জমাদানকারী খন্দকার মো. শাহাদাত হোসেন জানান, তিনি ট্রান্সকম লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার (প্রটোকল)

 ও আইন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। অ্যাকাউন্ট নম্বরটির প্রথম আবেদনকারী ফেরদৌসী জামানের স্বামী ফকরুজ্জামান ট্রান্সকম গ্রুপের চিফ লিগ্যাল কনসালটেন্ট। অর্থাৎ তিনি ফেরদৌসী জামানের স্বামী ফকরুজ্জামানের অধীনে কর্মরত। ১৩ বছর ধরে তিনি ট্রান্সকম লিমিটেডের আইন শাখায় কর্মরত থাকায় চিফ লিগ্যাল কনসালটেন্ট ফকরুজ্জামানের সহধর্মিণী ফেরদৌসী জামানের বিভিন্ন কাজকর্মে সহযোগিতা করতেন।

খন্দকার মো. শাহাদাত হোসেন জানান, ফকরুজ্জামানের অফিস থেকে তিনি ২০১৬ সালের ২, ৩ ও ৮ মে মোট ছয় কোটি ৫০ লাখ টাকা নিয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্র্যাংকের বনানী শাখায় ফেরদৌসী জামানের হিসাবে জমা দেন। ২০১৬ সালের ৬ অক্টোবর ফেরদৌসী জামানের একক নামে আরও একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়। আগের হিসাবের সব টাকা এই হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০