প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) কর্তৃক তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ করার প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে সদর উপজেলার জাফরপুর ও হায়দারপুর গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা। গতকাল বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরের বিজিবি ক্যাম্পের পেছনে হায়দারপুর ও জাফরপুর গ্রামের মাঠে নিজেদের জমির সামনে কৃষকরা এ মানববন্ধন করেন। পরে বেলা দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ডিসির কাছে স্মারকলিপি দেন তারা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার জাফরপুর ও হায়দারপুর গ্রামের মাঝখানে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ রোডে চুয়াডাঙ্গা ৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর। ওখানে বিজিবি ট্রেনিং সেন্টার করার জন্য জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে কৃষকদের দাবি, জাফরপুর ও হায়দারপুরের ৩৮ ও ৩৯নং মৌজার যে জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা তিন ফসলি জমি। এসব জমিতে ১২ মাসে তিনটি ফসল হয় বলেও দাবি কৃষকদের। তারা এ জমি অধিগ্রহণের জন্য দিতে রাজি নয়।
গ্রামবাসীদের গণস্বাক্ষর করা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জাফরপুর ও হায়দারপুরের গ্রামের মানুষ চাষাবাদ ও কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। এ এলাকায় ধান, ভুট্টা, পান, ডাল ফসল, আলু, কপি এবং খেজুর গাছের রস উৎপাদন হয়; যা রাজধানীসহ সারাদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। ৩৮ ও ৩৯নং মৌজায় যেসব চাষযোগ্য জমি রয়েছে, সেখানে ১৪ মাসে ৪ ফসল উৎপন্ন করা হয়ে থাকে। ৩৮ ও ৩৯নং মৌজায় বিজিবি ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প রয়েছে। সেখানে ট্রেনিং সেন্টার করার জন্য বসতবাড়িসহ ৩০০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হবে শোনা যাচ্ছে। আমরা আমাদের কৃষিজমি হারাতে চাই না।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, বিজিবি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ২৭৫ বিঘা ও হায়দারপুর মৌজায় ৭৫ বিঘা কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে আগেই। জেলা স্টেডিয়ামে নির্মাণের জন্য জাফরপুর মৌজায় ৫০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জেলা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ১৫ বিঘা কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড সাব-স্টেশন প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ২০ বিঘা কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক বন বিভাগ অফিস ও নার্সারির জন্য জাফরপুর মৌজায় ১৫ বিঘা কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
ব্র্যাক ও গণস্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ৫ বিঘা কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা। সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও জাফরপুর ও হায়দারপুর গ্রামবাসীর ব্যক্তি মালিকানা জমির ওপর খাল খননের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রায় ৩৫০ বিঘা ফসলি জমিতে খাল খনন করা হয়েছে। বর্তমানে বিজিবি বসতবাড়িসহ প্রায় ৩০০ বিঘা কৃষিজমি অধিগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যা বাস্তবায়ন হলে জাফরপুর ও হায়দারপুর গ্রামে কৃষিজমি বলে কিছুই থাকবে না। আমরা গ্রামবাসীরা কোনোভাবেই কৃষিজমি আর দেব না।