কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির বাজেট আলোচনা: চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। ফলে কৃষকদের সুরক্ষা দিতে চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা ছিল। কিন্তু এ বছর দুর্যোগের কারণে চালের বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাই চালের বাজারে সংকট এড়াতে চাল আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। তবে দীর্ঘমেয়াদে কৃষি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দিকে জোর দেওয়া দরকার।

গতকাল রোববার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত কৃষি উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও জাতীয় বাজেট শীর্ষক আলোচনায় গতকাল এসব কথা বলেন বক্তারা। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের চালের মজুত ছিল যথেষ্ট। এবার আমরা ৫০ লাখ লোককে ১০ টাকা দরে চাল দিয়েছি। এ ছাড়া হাওরে দুর্যোগের কারণে সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। তবে সংকটটি কৃত্রিম। টাকা দিলে চাল পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ মজুতদাররা চাল আটকে রেখেছে। তবুও চাল আমদানিতে কিছু উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা যেতে পারে।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এবারের বাজেট নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। নির্বাচনের আগের বছর বলেই এতটা সমালোচনা হয়েছে। আসলে যে কোনো সংস্কার বা সংযোজন ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে করা উচিত ছিল। যদি ২০১৪ সালে নির্বাচনের পরই আমরা ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতাম তাহলে এত সমালোচনা হতো না। তবে, এখন এ নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই। বাজেট পাশের আগে এর অনেক পরিবর্তন হবে, যা হবে তাতে সবাই খুশি হবে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। বাজেট পাসের পর আর সমালোচনা হবে না। আমরা জানি যে, এক বছর পর নির্বাচন। আমরা ভোটের রাজনীতি করি। সুতরাং ভোটের ফলাফলে প্রভাব সৃষ্টি হবে এমন সিদ্ধান্ত আমাদের সরকার নেবে না।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ ড. মো. আবদুর রাজ্জাক এবং সংসদ সদস্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কৃষিবিদ আবদুল মান্নান। এ ছাড়া এনবিআরের সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর, সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ড. মিহির কুমার রায়, কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক মহাসচিব আহসানুজ্জামান লিটু, কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মজিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় ‘কৃষি উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও জাতীয় বাজেট-২০১৭’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুল হক কাজল ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. ফেরদৌস আলম।

সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কৃষিবিদ ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, বাজেটে কৃষিখাতের গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা সরকারের ছিল। এ খাতকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। মোট দেশজ আয়ে (জিডিপি) কৃষির অবদান কমলেও এখনও কর্মসংস্থানের ৪৫ ভাগই কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল।

তবে সংসদ সদস্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কৃষিবিদ আবদুল মান্নান এ সময় বলেন, বাজেটের আকার সমস্যা নয়। জিডিপির ৩০ শতাংশ আকারের বাজেটও এ অঞ্চলের দেশগুলোয় হয়ে থাকে। আমাদের দেশে ১৮ শতাংশ হয়েছে। এটা খুব বড় নয়। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নে এনবিআরের সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে জনমনে। ভ্যাট নিয়ে অর্থমন্ত্রী তার প্রতিমন্ত্রীকেই বুঝাতে পারেননি। ব্যবসায়ীরা বলে আমরা প্রশিক্ষণ পাইনি। সব নিয়ে সংসদে আলোচনা হচ্ছে। আবার অর্থমন্ত্রী সিলেটে গিয়ে ঘোষণা দিলেন কোনো পরিবর্তন হবে না। আলোচনার সময় আগাম ঘোষণা দেওয়ার দরকার কী?

ড. মিহির কুমার রায় বলেন, বাজেটের লক্ষ্য থাকে তিনটি। আয়-ব্যয়ের হিসাব, অগ্রাধিকার ঠিক করা এবং রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন। কিন্তু এবারের বাজেটে আয়-ব্যয়ের হিসাব ছাড়া আর কোনো বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেখা যায়নি। এ সময় বক্তারা কৃষিবিদদের নীতি নির্ধারণীতে অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য একটি কমিশন গঠনের পাশাপাশি কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব আরোপের পরামর্শ দেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০