সংসদে সরব জাতীয় পার্টি

 

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনে সরব ভূমিকা রাখছে ‘বিরোধী দল’ জাতীয় পার্টি। গতকাল রোববার বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন দলটির একাধিক এমপি। এতে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা করে কোনো লাভ নেই। জনগণ বক্তৃতা শুনতে চায় না, মুক্তি চায়। তারা প্রধানমন্ত্রীকে তার দলের নেতাকর্মীদের লোভাতুর জিহ্বা নিয়ন্ত্রণের পরামর্শও দিয়েছেন বিরোধী দলের এমপিরা।

সংসদে বাজেট অধিবেশনে গতকাল বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান ও আবু হোসেন বাবলা। এ দিন দলটির সংসদীয় নেতা ও কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ তার দলের পক্ষ থেকে চালের দামের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বেগ জানিয়ে সংসদে সরকারের বিবৃতি দাবি করেন।

এতে দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের আইনের সমালোচনা করে বলেন, বাজেটে ভ্যাটের বোঝা চাপানো হয়েছে। এটা অপ্রত্যাশিত, অনাকাক্সিক্ষত। আগামী নির্বাচন ঘিরে অপশক্তি সোচ্চার। এ অবস্থায় বাজেটে ভ্যাটের এ প্রস্তাব আত্মঘাতীমূলক সিদ্ধান্ত। ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থ আবগারি শুল্কের আওতামুক্ত রাখা হোক। যেহেতু আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি, তাই তাদের কষ্ট হয়, এমন কিছু করা উচিত নয়। ব্যাংকিং খাতে হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা চুরি হয়েছে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে পারলাম না। চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তাও আমরা জানতে চাই।

জাপা মহাসচিব প্রশ্ন তোলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া বাজারে ছেড়ে দিলেন কেন? নির্বাচন সামনে কী করে চালের দাম বাড়লো? কখন থামবে? পার্লামেন্টে এটা বলুন। মানুষ জানুক কী কী পদক্ষেপ নি?য়েছেন। চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের সমালোচনা চলছে কয়েক মাস ধরে।

সরকারি হিসাবে গত এক মাসে সাধারণ মানের মোটা চালের দাম বেড়েছে আট শতাংশের বেশি; আর এক বছরে বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ।

পরে দলের নেত্রী রওশন এরশাদ বলেন, চালের দাম বাড়ছে বেপরোয়াভাবে। মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বিব্রত অবস্থায় পড়েছে দেশের গরিব মানুষ। অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতায় মøান হয়ে যাচ্ছে সরকারের সব অর্জন। চালের দাম বৃদ্ধির জন্য অসাধু ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন তিনি। বলেন, চলতি বছর হাওর এলাকার বোরো ফসল মার খাওয়ায় খাদ্য ঘাটতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। এ সুযোগে অসাধু সিন্ডিকেট চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। অসৎ ব্যবসায়ীদের সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। পরে তিনি পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটি ও বান্দরবানের সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদির দ্রুত সংস্কার ও মেরামতের দাবি জানান। স্বজন হারানো মানুষের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতেও বলেন তিনি।

দলটির অপর সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান বলেছেন, অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা করেও কোনো ‘লাভ’ হবে না। আলোচনা করে কী হবে? আমরা যত মায়াকান্নাই করি না কেন, বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়ে যাবে। এ বাজেট হচ্ছে ‘তাচ্ছিল্যের অট্টহাসি’। অর্থমন্ত্রী কথায় কথায় ‘রাবিশ’ বলেন। আগে আমরা হাসতাম, এখন সাধারণ মানুষ হাসে। এটা উনার বয়সের ভারে, না কি কৌশল, বলা মুশকিল।

সরকারের উদ্দেশে নোমান বলেন, উন্নয়নের মহাসড়কে ওঠার সিঁড়ি জনগণ খুঁজে পাচ্ছে না। মানুষ বক্তৃতা শুনতে চায় না, মুক্তি চায়। ঈদের আগে যে দুর্ভোগ তা থেকে মুক্তি চায়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিরোধী দলের এ সদস্য বলেন, দলের নেতাকর্মীদের লোভাতুর জিহ্বার লাগাম দিন, দেশ ভালো নেই।

আরেক সদস্য আবু হোসেন বাবলা তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্বের কোথাও ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক নেই। এ প্রস্তাব অত্যন্ত বিপজ্জনক। এতে আমানতকারীরা নিরুৎ?সাহিত হবেন। পাহাড় ধসের কারণ অনুসন্ধানের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এত মৃত্যুর দায় কে? নেবে? প্রকৃতির ওপর দায় দিলে প্রকৃত অপরাধীরা ছাড়া পাবে। বন উজার করা হচ্ছে, পাহাড় কাটা হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয় না। রাজধানীতে নিজের সংসদীয় এলাকায় জলাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে বাবলা বলেন, এলাকাবাসীর কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। আমার কী করার আছে? এ দফতর থেকে ওই দফতরে দৌড়াচ্ছি। ঢাকা, চট্টগ্রাম সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল। অনেকে উপহাস করেন, নৌকায় ভোট দিয়েছেন তাই সরকার নৌকায় চড়াচ্ছে। আগামীতে মনে হয় তারা আর খুশি মনে নৌকায় উঠবেন না।

উল্লেখ্য, গতকাল নির্ধারিত সময়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ কক্ষে উপস্থিত হলেও অধিবেশন শুরু হয়নি। সকাল সাড়ে দশটায় প্রধানমন্ত্রী অধিবেশন কক্ষে যান। এ সময় অধিবেশন কক্ষে ১৬ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ১১টার দিকে অধিবেশন শুরু হয়। সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী অধিবেশন শুরু করতে হলে ৬০ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকতে হয়।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০