নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সাংবিধানিক সংস্থাগুলোর প্রধানদের পাশাপাশি বিশিষ্ট নাগরিক হিসেবে থাকছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। গতকাল রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন।
আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি ওবায়দুল হাসান গঠিত সার্চ কমিটির সভাপতি থাকছেন। তিনি আগের সার্চ কমিটির সদস্য ছিলেন। সার্চ কমিটিতে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে থাকছেন বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান। মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী এবং সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন এ সার্চ কমিটিতে থাকছেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গতকালই এ সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপন হয়েছে। এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগই দেবে।
প্রজ্ঞাপনের পর সার্চ কমিটির প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘শিগগিরই বৈঠক করবেন তারা।’ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সার্চ কমিটি কাজ শেষ করবে বলে জানান তিনি।
গঠিত এ সার্চ কমিটি নতুন ইসি গঠনের জন্য কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবে। সেই নাম থেকে ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আর সেই ইসির পরিচালনায় পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হবে।
সদ্য পাস হওয়া আইন অনুযায়ী, ইসি গঠনে নামের সুপারিশ চূড়ান্তের জন্য সার্চ কমিটির জন্য সময় ১৫ দিন। কিন্তু কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের মেয়াদ ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে যাচ্ছে। ফলে সেই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি যদি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে চান, তাহলে হাতে সময় ১০ দিনও নেই। অবশ্য বিগত সময়ে সার্চ কমিটিতে এক সপ্তাহেই কাজ শেষ করতে দেখা গিয়েছিল।
সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। আইন না থাকায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সময় থেকে সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন গঠন শুরু হয়, যা অনুসরণ করেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
এবার সার্চ কমিটি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের মধ্যেই গত মাসে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন’র খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি, যা গত ২৭ জানুয়ারি সংসদে পাস হয়। সংসদের ভেতরে ও বাইরে আইনটি নিয়ে চলে অনেক আলোচনা-সমালোচনা।
সার্চ কমিটির কাজ সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।
এ অনুসন্ধান কমিটি সিইসি ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুইজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটির গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে হবে।
সার্চ কমিটি সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।
সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে-তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। ন্যূনতম ৫০ বছর বয়স হতে হবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সিইসি ও কমিশনার পদের জন্য ছয়টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। আদালত অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করলে। দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে। নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২ এর অধীনে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে। আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে।