বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রার বেশ কিছু ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতিও পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জনসম্পদের চাহিদা নিরূপণ করা এবং চাহিদা অনুসারে প্রয়োজনীয় জনশক্তি তৈরি ও সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমাদের বৈদেশিক আয়ের প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স বৃদ্ধি মানে দেশও এগিয়ে যাওয়া।
গতকাল শেয়ার বিজের খবরে বলা হয়, ২০৪০ সালের মধ্যে জাপান সরকার ঘোষিত অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে প্রায় ৬৭ লাখ ৪০ হাজার অভিবাসী কর্মী দরকার বলে জানিয়েছে টোকিওর সরকারি থিংকট্যাংক গ্রুপ। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জাইকা আমাদের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী। দেশটির সঙ্গেও আমাদের ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা এ বিষয়গুলো কাজে লাগাতে পারি।
জাপানের শ্রমবাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় কর্মসংস্থানের চেষ্টায় দৌড়ঝাঁপ করা বেকার তরুণদের মনে আশার সঞ্চার হবে। আমাদের মনে আছে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে অনিয়ম করায় দেশটি আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক নেয়া হঠাৎ বন্ধ করে দেয়। ওই দেশে অবস্থানকারী শ্রমিকদেরও ভোগান্তির শিকার হতে হয়। পরবর্তী সময়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উš§ুক্ত হলেও নতুন নিয়ম চালু করা হয়। জাপানের শ্রমবাজার ধরতে আমাদের পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। অবশ্য জাপানে দক্ষ জনশক্তি পাঠানো আমাদের জন্য অপেক্ষাকৃতভাবে সহজ হবে। দেশটিতে কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বছর দুয়েক আগে। ওই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী পাঁচ বছরে সাড়ে তিন লাখ দক্ষ কর্মী বিনা খরচে জাপান যাওয়ার সুযোগ পাবেন। অন্য দেশের তুলনায় জাপানে আয়ের সুযোগও বেশি। তবে জাপানি ভাষা শেখা ছাড়া দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোনোভাবে গেলেও কলুর বলদের মতো খাটতে হবে, যৌক্তিক পারিশ্রমিক পাওয়া যাবে না। ঢালাওভাবে জনশক্তি না পাঠিয়ে কারিগরি কাজ জানা শ্রমিক এবং দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক পাঠাতে হবে। জাপানের শ্রমনীতি এবং ভাষা ও সংস্কৃতিগত বৈশিষ্ট্য জানতে হবে দেশটিতে যেতে ইচ্ছুক শ্রমজীবীদের।
আমাদের বিদেশগামী কর্মীরা বিদেশ যেতে কিংবা বিদেশে গিয়ে নানাভাবে নাজেহাল হন, তা কমবেশি সবাই জানি। জাপানে যাতে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি পাঠানো যায়, সে লক্ষ্যে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। জনশক্তি পাঠাতে হলে সেটি কোন প্রক্রিয়ায় হবে, আগেই তা সরকারকে নির্ধারণ করতে হবে।
জাপানে শ্রমবাজার চালু হওয়ায় আমরাও আশাবাদী। তবে বিদেশে গমনেচ্ছু ব্যক্তিকে বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাড়াহুড়া না করে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে আগে। কোনো দেশে জনশক্তি রপ্তানির খবরে তৎপরতা বাড়ে একশ্রেণির জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের। তারা লোভ দেখিয়ে নিরীহ মানুষকে বিভ্রান্ত করে। তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে।
এখন আমাদের উচিত হবে, জাপানের চাহিদা বিবেচনায় রেখে দক্ষ কর্মী তৈরিতে উদ্যোগ নেয়া এবং বাজার সৃষ্টিতে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো। বিদেশি শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে জাপান অতি সতর্ক। তাই আমাদের কোনো অপকর্মের কারণে যেন বাজারটি বন্ধ হয়ে না যায়, সেদিকে আমাদেরও যতœবান হতে হবে।