বাংলাদেশের গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের একজন মৌলিক কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। পুরো নাম আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ খান। তার দু’টি দীর্ঘ কবিতা ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ এবং ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’ আধুনিক বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডারে অভূতপূর্ব সংযোজন। আজ আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ১৯৩৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে মাধ্যমিক, ১৯৫০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে এমএ পাস করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৭ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সচিব, বাংলাদেশ সরকারের কৃষি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি উইনরক ফাউন্ডেশনের সম্মানিত সদস্য; হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ও জন এফ কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের ফেলো ছিলেন। আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর আরেকটি পরিচয় তিনি বাংলাদেশের একজন মৌলিক কবি। তার কবিতায় আবহমান বাংলার অকৃত্রিম ছবি পাওয়া যায়। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তার কবিতার সূচনা হয় এবং বিকাশ ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের সামগ্রিক জনজীবনের আশা-নিরাশা এবং স্বপ্ন-বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে। তিনি তার কাব্যরীতিতে মূলত দু’টি প্রবণতাকে অনুসরণ করেছেন: একটি গীতিমুখ্য কাব্যরীতি আর অন্যটি মহাকাব্যিক। পঞ্চাশের দশকে রচিত তার প্রথম গীতিমুখ্য কাব্যরীতি মূলক কাব্যগ্রন্থ সাত নরী হার এবং পরবর্তীকালের কখনো রং, কখনো সুর ও কমলের চোখ। আশির দশকে তিনি মহাকাব্যিক কাব্যরীতিতে রচনা করেন তার সর্বাধিক জননন্দিত কাব্যগ্রন্থ ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’ (১৯৮১), ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’সহ আরও কয়েকটি গ্রন্থ। তার রচিত অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ- ‘আমার সময়’, ‘সহিষ্ণু প্রতীক্ষা’, ‘আমার সকল কথা’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ এবং সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ ‘মসৃণ কৃষ্ণগোলাপ’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনা করেন। আশির দশকে তিনি ‘পদাবলি’ নামে কবিদের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটি দর্শনীর বিনিময়ে কবিতা সন্ধ্যার আয়োজন করত। কাব্য রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ১৯৭৯ সালে একুশে পদক ও ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০০১ সালের ১৯ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা