চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২০-২১ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা প্রাথমিক হিসাবে ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। একই সঙ্গে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৯১ ডলার, যা প্রাথমিক হিসাবে ছিল দুই হাজার ৫৫৪ ডলার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ হিসাব প্রকাশ করেছে।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে শেষে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যেও প্রবৃদ্ধির এ অর্জন অনেক প্রশংসনীয়।

চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট জিডিপির আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১৬ বিলিয়ন ডলার, যা প্রাথমিক হিসাবে ৪১১ বিলিয়ন ডলার ধরা হয়েছিল। মহামারির শুরুর ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও মহামারি পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্বলন করা হয়। এখন চূড়ান্ত হিসাবে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাওয়ার কথা বলছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় যেখানে ২২২৭ ডলার ছিল, নতুন ভিত্তিবছর ধরে হিসাব করায় ২০২০-২১ অর্থবছরে তা এক লাফে ১৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়ে দুই হাজার ৫৫৪ ডলারে উন্নীত হতে পারে বলে গত নভেম্বরে ধারণা দিয়েছিল পরিসংখ্যান ব্যুরো। চূড়ান্ত হিসাবে তা আরও বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৫৯১ ডলার।

একনেক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এ প্রবৃদ্ধিকে ‘মিরাকল ও সুন্দর’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘এ প্রবৃদ্ধি সারাবিশ্বে টপমোস্ট না হলেও সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধির একটি হবে।’ চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাথমিক হিসাব থেকে এতটা বাড়ল কীভাবে, সেই ব্যাখ্যায় পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, অর্থনীতির প্রধান তিন সূচক কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি প্রাথমিক হিসাবের তুলনায় চূড়ান্ত হিসাবে বেশি হয়েছে। সে কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে অর্থনীতির প্রধান তিন খাতের মধ্যে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা সাময়িক হিসাবে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ ধরা হয়েছিল। চূড়ান্ত হিসাবে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা সাময়িক হিসাবে ছিল ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ। তবে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি সাময়িক প্রাক্কলনের ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ হয়েছে।

এ প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনের প্রসঙ্গ তুলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব খুশি হয়েছেন। সরকারের সবাইকে এবং বিশেষ করে এই উৎপাদন বৃদ্ধিতে যাদের পরিশ্রম আছে কৃষক-শ্রমিক, দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে কাজ করেন, তাদের সবাইকে তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন।’

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘সংখ্যাটা বেড়েছে এই কারণে যে, আমাদের রপ্তানি অনেক বেড়েছে আগের বছরের তুলনায়। এটার প্রভাব পড়েছে। আমাদের রেমিট্যান্স অনেক বেড়েছে, প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই দুটা কন্ট্রিবিউটিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে।’ পাশাপাশি কভিড মহামারির সময়ে সরকারের ‘সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা’ ও প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন হওয়ায় ‘সুফল’ পাওয়া গেছে বলে মনে করেন প্রতিমন্ত্রী।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। তবে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এবার বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০