আরবি হরফে বাংলা চালুর অপচেষ্টা

কাজী সালমা সুলতানা:আরবি হরফে বাংলা লেখার একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু হলেও তা কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৪৯ সাল থেকে। ১৯৪৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের শিক্ষাসচিব ফজলুর রহমান পেশোয়ারে শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের এক সভায় বলেন, সহজ ও দ্রুত যে হরফের মারফত পড়া যায়, সেই হরফই সবচেয়ে ভালো। সুতরাং দ্রুত লিখন ও পঠনের পক্ষে সুবিধাজনক বলিয়া আরবিকেই পাকিস্তানের হরফ করা উচিত। 

পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাকে সরকারি কর্মকাণ্ড ও শিক্ষার একমাত্র ভাষা এবং সেইসঙ্গে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার অব্যাহত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে খাজা নাজিমুদ্দিনের উদ্যোগে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে আরবি হরফে প্রচলন করার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা হরফকে হিন্দু বর্ণ আখ্যা দিয়ে তারপর বাংলাকে আরবি হরফে বাংলা লেখা প্রচলন করা। এই লক্ষে ৯ মার্চ ১৯৪৯ মৌলানা আকরাম খানকে চেয়ারম্যান করে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।

এই লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকার একটি বড় তহবিল গঠন করে এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্লামেন্টের সপক্ষে বক্তব্য দেন। কিন্তু ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ সব ভাষাতত্ত্ববিদ আরবি হরফে বাংলা লেখার এই উদ্ভট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তুপাকিস্তান সরকার তাদের মনোভাবের ব্যাপারে অনড় থাকে। 

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গী, বিভিন্ন ন্যায্য দাবি-দেয়া পূরনে অস্বীকৃতি এবং ভাষার ক্ষেত্রে মুসলিম লীগ সরকারের নীতির বিরোধিতায় মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের আহ্বায়ক হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

ভাসানী ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৭ পর্যন্ত আট বছর তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ভাষা আন্দোলনসহ পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেন। পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আওয়ামী মুসলিম লীগ ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং রাজপথের আন্দোলন সংগঠনের পাশাপাশি পার্লামেন্টেও রাষ্ট্রভাষা ভাষার দাবিতে সোচ্চার থাকেন।

১৯৫০ সালের ১১ মার্চ কমিউনিস্ট ভাবধারার ছাত্রনেতা আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয় ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ মুভমেন্ট কমিটি। এই কমিটি ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৫০ সালের এপ্রিল মাসে পার্লামেন্টে আরবি হরফে বাংলা লেখার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০