শেয়ার বিজ ডেস্ক: কভিড মহামারির মধ্যে গত বছর যুক্তরাজ্যের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে সাত শতাংশ, যদিও কভিডের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিধিনিষেধের কারণে ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক দুই শতাংশ ঋণাত্মক ছিল। সর্বিকভাবে ২০২০ সালের ৯ শতাংশের বেশি ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি কাটিয়ে ২০২১ সালে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে ব্রিটিশ অর্থনীতি, যা বার্ষিক ভিত্তিতে ১৯৪১ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তীকালে সবচেয়ে দ্রুততম আর্থিক প্রবৃদ্ধি। খবর: বিবিসি, গার্ডিয়ান, সিএনবিসি।
স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটেস্টিকস (ওএনএস) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওমিক্রনের বিধিনিষেধের কারণে ডিসেম্বরে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও বিদায়ী ২০২১ সালে ব্রিটিশ অর্থনীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করেছে। যদিও বিশ্বব্যাপী কভিড মহামারির কারণে ২০২০ সালে দেশটিতে কঠোর লকডাউন ও বিধিনিষিধে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ সংকোচন প্রবৃদ্ধি ছিল, যেখান থেকে দ্রুত প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে। দেশটি সরকারি ওই পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের এ প্রবৃদ্ধি ১৯৪১ সালের পরবর্তী সময়ে ১২০ বছরের মধ্যে দ্রুত প্রবৃদ্ধি।
এ প্রবৃদ্ধিকে দেশটির অর্থমন্ত্রী ঋষি সনাক ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ বলে উল্লেখ করেছেন।
ওএনএসের তথ্য বলছে, গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিক তথা বছরের শেষ তিন মাস প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ করে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে সংস্থার পরিচালক ড্যারেন মরগান বলেছেন, ওমিক্রন বিস্তারের পর কিছু সেবা বন্ধ রাখার পরও ব্রিটিশ অর্থনীতি ‘বেশ ভালো’ ছিল।
দেশটির এ আর্থিক প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিবিদদের অনুমানকেও ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে ওএনএসের অর্থনীতিবিদরা ধারণা করেছিলেন, বিদায়ী বছরে ব্রিটিশ আর্থিক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ হবে, আর ডিসেম্বরে ওমিক্রনের কারণে প্রবৃদ্ধির সংকোচন হবে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ, সেখানে দেখা যায়, বছর শেষে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে ওএনএসের পরিচালক ড্যারেন মরগান বলেন, ২০২১ সালের যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি দেখা যায় জি৭-ভুক্ত ধনী দেশগুলোর মধ্যে দ্রুত প্রবৃদ্ধি। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ভিত্তি ধরে ২০২১ সালের এ উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি এসেছে। যদিও ২০২০ সালে অর্থনীতি খুব দ্রুতই সংকুচিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, আপনি যদি প্রশ্ন করেন যে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি এখন কোথায় আছে? তবে তুলনা করলে এখন মহামারি আগের অবস্থানে রয়েছে। তবে আমি বলব, এখন জি৭ এবং ইউকের মাঝামাঝি অবস্থান করছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন কানাডা ও ফ্রান্সের ওপরে অবস্থান করছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে এখন ইতালি, জার্মানি ও জাপানের ওপরে রয়েছে।
এদিকে দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। এ অবস্থায় গত সপ্তাহে আবারও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আগামী এপ্রিলে দেশটির মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ স্তর তথা ৭ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছাবে, যেখানে ২০০৪ সাল থেকে প্রথমবারের মতো সুদহার বৃদ্ধি করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আগামী এপ্রিল থেকে সুদহার শূন্য দশমিক এক শতাংশ থেকে বাড়িয়ে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ করা হবে।
যদিও দেশটির জ্বালানি সংস্থাগুলো গত এক বছরে ৬৯৩ পাউন্ড বা ৯৩৮ ডলার জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি করেছে। সম্প্রতি পাম্পগুলোয় গ্যাস সংকটে দাম অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল সংস্থাগুলো। এমনকি অনেক গ্যাস পাম্প বন্ধ করেও দেয়া হয়েছিল।
এদিকে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় গত সপ্তাহে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ২০২২ সালের জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশের পরিবর্তে কমিয়ে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পুনর্নির্ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ অনলাইন ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজম্যান্ট ফার্ম নাটমেগের অর্থনীতি-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যানাবেল উইলিয়ামস বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় লাখ লাখ মানুষের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এটি যদি দীর্ঘসময় চলতে থাকে, তবে বৃহত্তর অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের অন্যতম ব্যস্তমত বিমানবন্দর হিথ্রো দিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওমিক্রনের কারণে ৫৬ শতাংশ যাত্রী ভ্রমণ বাতিল করেছেন। তবে হিথ্রো কর্তৃপক্ষ আশা করছে, জানুয়ারির খরা তারা দ্রুতই কাটিয়ে উঠবে। আসন্ন গ্রীষ্মকালে যাত্রীসংখা বাড়বে বলে তারা মনে করছে।
কেবল জানুয়ারিতে ওমিক্রনের কারণে ১৩০ লাখ যাত্রী ভ্রমণ টিকিট বাতিল করেছেন, যা মোট যাত্রীসংখ্যার ৫৬ শতাংশ। সাধারণত ডিসেম্বরের ক্রিসমাসের পর লন্ডনের এ বিমানবন্দর দিয়ে নতুন বছরের শুরুতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রী ভ্রমণ করে থাকেন। কিন্তু কভিডের ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশ ভ্রমণে করাকরি আরোপ করা হয়। ফলে বুকিং দেয়া ভ্রমণটিকিট বাতিল করেন যাত্রীরা।