দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন

কাজী সালমা সুলতানা: রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলন: রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা প্রথম ধর্মঘটের ডাক দেয়। এদিন ভুবন মোহন পার্কে ছাত্ররা এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। ২৭ মার্চ নওগাঁতে এর চেয়েও বড় সমাবেশ ঘটে। এদিন ভাষা আন্দোলনের জন্য সর্বদলীয় কমিটি গঠিত হয়। আন্দোলনের জন্য সভাস্থলেই মোটা অঙ্কের চাঁদা গৃহীত হয়।

ঢাকাতে কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ ১১ মার্চ দিবসের ডাক দিলে রাজশাহীতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এই মিছিলে পুলিশের হামলা হলে তা শহরে প্রবল উত্তেজনা ছড়ায়। হামলার সময় অনেক ছাত্রনেতা আহত হন।

চাঁদপুরে ভাষা আন্দোলন: ১১ মার্চ চাঁদপুরে হরতাল ডাকা হয়নি। তবে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অধিকাংশ দোকান-পাট বন্ধ থাকে। সন্ধার পর ছাত্র জনতার যৌথ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে। পরে সভায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতিদানের আহ্বান জানানো হয়।

বিক্রমপুরে ভাষা আন্দোলন: ১৯৪৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে মুন্সীগঞ্জে ছাত্রজনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এদিন শহরের সব বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা হরতাল পালন করে এবং তারা শহরে মিছিল করে।

বগুড়ায় ভাষা আন্দোলন: বগুড়ায় কবি আতাউর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি ভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়।

কলেজের অধ্যাপক ও ছাত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত এই সংগ্রাম পরিষদে রহিমা খাতুন ও সালেহা বেগম পরবর্তীতে খুবই গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১১ মার্চ ছাত্র জনতার মিছিল বগুড়া কলেজ থেকে বের হয়ে শহরের দিকে যাত্রাকালে কলেজের অধ্যক্ষ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সামনে পড়ে যান। ছাত্ররা তাকে মিছিলে নেতৃত্ব দিতে অনুরোধ করে। তিনি তা আনন্দে গ্রহণ করেন। পরে মিছেল শেষে বগুড়া জেলা স্কুল ময়দানে আয়োজিত জনসমাবেশে সভাপতির ভাষণে তিনি অত্যন্ত তথ্যনির্ভর বক্তৃতা করে সে াতা সাধারণকে বিমোহিত করেন।

খুলনায় ভাষা আন্দোলন: ২৮ ফেব্রুয়ারি খুলনার দৌলতপুর কলেজে সব সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা এক প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। এ সভায় নাজিমউদ্দিনের প্রতি নিন্দা ও ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে অভিনন্দিত করে প্রস্তাব পাস করা হয়।

১১ মার্চ খুলনার আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র সংগঠনগুলো যৌথভাবে ধর্মঘট ডাকলে দৌলতপুর কলেজসহ শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা এতে অংশগ্রহণ করে। বিকালে প্রায় দুই হাজার লোকের সমাবেশে একটি সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বরিশালে ভাষা আন্দোলন: ২৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে মুসলিম ইনস্টিটিউড প্রাঙ্গণে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সন্ধ্যার পর এক শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে। বিএম কলেঝে ছাত্রদের উদ্যোগে প্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়। টাউন হলে আরেকটা সভায় রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও বিনা খেসারতে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের দাবিতে প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সিলেটে ভাষা আন্দোলন : ভাষা আন্দোলনে সিলেটের অবদানের পাশাপাশি বিরোধীগোষ্ঠীর ভূমিকা অন্যান্য জেলার থেকে বেশি ছিল। ৮ মার্চ গোবিন্দ পার্কে এক জনসভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় আলোচকরা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার দাবি করা হয়। তবে এ সময় স্থানীয় একদল উর্দু ভাষার পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে মঞ্চ দখল করার চেষ্টা করে। হামলা-পাল্টা হামলা শেষে ছাত্ররাই মঞ্চ দখলে নেয়। এ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ মার্চ সিলেটের মহিলারা এক সমাবেশের আয়োজন করে। দলে দলে ছাত্রজনতা এ মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য যখন সমবেত হচ্ছিল এমন সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ভাষার প্রশ্নে দুই মাসের জন্য সভা-সমাবেশ বেআইনি ঘোষণা করে বার্তা জারি করেন। 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০