সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা বাতিল নিয়ে ‘ইঁদুর-বিড়াল খেলা’

রহমত রহমান:পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন সন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগে একে একে ৩৪টি মামলা হয়েছে। যাতে রাজস্ব জড়িত প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। এ প্রতিষ্ঠানকে সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত ৩ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা বাতিলে নির্দেশনা দিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটকে চিঠি দেয়। সে নির্দেশনা অনুযায়ী, ২৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা বাতিলের আদেশ জারি করে। আদেশ জারির ১৬ দিন পর সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা বহাল করে এনবিআর আবার নির্দেশনা জারি করে। সুবিধা বাতিল আর বহালের এ ইঁদুর-বিড়াল খেলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়, এনবিআর থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া একজন সদস্যের আক্রোশের কারণে এমন ইঁদুর-বিড়াল খেলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এনবিআরের কোনো কর্মকর্তা মুখ খুলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে গোল্ডেন সনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেলাল আহমেদ গতকাল রোববার রাতে শেয়ার বিজকে বলেন, আমি ইন্ডাস্ট্রি করে কি ভুল করেছি? আমার এখানে জয়েন্ট বেঞ্চার ইনভেস্টমেন্ট। আমাদের দুই বছর যাচাই-বাছাইয়ের পর বন্ড লাইসেন্স দেয়া হলো। এরপর অন্যায়ভাবে প্রায় ৫০টি মামলা দেয়া হলো! এনবিআর সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা বাতিলের নির্দেশ দেয়ার পর আবার কেন তা বহাল করল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব তামাশা। বিষয়টি বর্তমান চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে বলার পর তিনি সায় দিয়েছেন। তাই বহাল হলো। তবে এনবিআরের সদ্য অবসরে যাওয়া একজন সদস্যের আক্রোশের কারণে সুবিধা বাতিলের খেলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

৩ জানুয়ারি বন্ড কমিশনারেটকে দেয়া এনবিআরের চিঠিতে বলা হয়, ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এবং ২০ সেপ্টেম্বর সদস্যের (কাস্টমস: রপ্তানি ও বন্ড) সভাপতিত্বে এ-সংক্রান্ত দুটি সভা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা বাতিল ও বকেয়া শুল্ককর আদায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। যাতে বলা হয়, যেহেতু ২০০২ সালের সংশোধিত অর্থ আইনে সুপারভাইজড বন্ড-সংক্রান্ত আইনের ধারা তথা কাস্টমস আইন, ১৯৬৯-এর ধারা ১১৭ ও ১১৭-এ বিলুপ্ত করা হয়েছে। সেহেতু নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সুপারভাইজড বন্ড ইস্যু করা হবে না এবং কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির মামলা বা নিরঙ্কুশ বকেয়া পাওয়া না থাকলে, সেই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অনুমোদিত সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা বাতিল করা হবে।

চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের আওতাধীন আজিমপাড়া কর্ণফুলী এলাকার বন্ডেড প্রতিষ্ঠান মেসার্স গোল্ডেন সন সুপারভাইজড বন্ড পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি রাজস্ব ফাঁকির মামলা চলমান, যাতে জড়িত রাজস্ব ৬৫ কোটি ৫১ লাখ ৭ হাজার ৯৪৬ টাকা। এ বকেয়ার মধ্যে এক কোটি ৬৫ লাখ ১ হাজার ৭৮৫ টাকা আদায় হয়েছে। বাকি ৬৩ কোটি ৮৬ লাখ ৬ হাজার ১৯০ টাকা অনাদায়ী রয়েছে। এই বকেয়া পাওনা আদায় ও প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা বাতিলসহ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।

এনবিআরের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট আদেশ জারি করে। যাতে বলা হয়, এনবিআরের নির্দেশনা মোতাবেক গোল্ডেন সনের সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা বাতিল করা হলো। তবে প্রতিষ্ঠানটি অন্যান্য প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ন্যায় এ দপ্তর থেকে ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) গ্রহণ করে আমদানি করা কাঁচামালের বিপরীতে বন্ড সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

অন্যদিকে, বন্ড কমিশনারেটের আদেশ জারির ১৬ দিন পর এনবিআর থেকে বন্ড কমিশনারেটকে আবার চিঠি দেয়া হয়। যাতে বলা হয়, ৩ জানুয়ারির নির্দেশনা কার্যক্রম রহিতকরণপূর্বক গোল্ডেন সন লিমিটেডের অনুকূলে সুপারভাইজড বন্ড সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এনবিআর সূত্রমতে, গোল্ডেন সনের বিরুদ্ধে মামলা ও বকেয়া রাজস্ব বিষয়ে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট এনবিআরকে অবহিত করে চিঠি দেয়। চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের আওতাধীন আজিমপাড়া কর্ণফুলী এলাকার বন্ডেড প্রতিষ্ঠান মেসার্স গোল্ডেন সন লিমিটেড সুপারভাইজড বন্ড পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি রাজস্ব ফাঁকির মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় জড়িত রাজস্ব ৬৫ কোটি ৫১ লাখ ৭ হাজার ৯৪৬ টাকা। এর মধ্যে এক কোটি ৬৫ লাখ ১ হাজার ৭৮৫ টাকা প্রতিষ্ঠান পরিশোধ করেছে। বাকি ৬৩ কোটি ৮৬ লাখ ৬ হাজার ১৯০ টাকা অনাদায়ী রয়েছে। ৩৪ মামলার মধ্যে বেশিরভাগ মামলা উচ্চ আদালত ও আপিলাত ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০