প্রয়োজন না থাকলেও ৫ রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন

ইসমাইল আলী: পাঁচটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত অর্থবছর। চাহিদা না থাকার পরও কেন্দ্রগুলোর চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে চুক্তির মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি উচ্চহারে ক্যাপাসিটি চার্জও দেয়া হবে কেন্দ্রগুলোর জন্য। অভিযোগ রয়েছে, নানা রকম তদবির করে এ চার্জের অনুমোদন নিয়েছে কোম্পানিগুলো। যদিও এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সংশ্লিষ্টদের।

চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাবিত কেন্দ্রগুলো হলো ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার, ৪০ মেগাওয়াট সক্ষমতার খুলনা পাওয়ার কোম্পানি (কেপিসিএল-৩) নোয়াপাড়া, ১১৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেপিসিএল ইউনিট-২, ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট (সাবেক আইইএল কনসোর্টিয়াম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস) ও ১০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস (ওরিয়ন গ্রুপ)।

সূত্রমতে, কেন্দ্রগুলোর জন্য নতুন চুক্তিতে দৈনিক ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হবে মেগাওয়াটপ্রতি ২৭ দশমিক ৮২ ডলার। নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণের পর এ হার অনুমোদন করেন। যদিও ১৭ দশমিক ৩৪ ডলারের বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার পক্ষে ছিলেন না পিডিবির বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন। তবে ক্যাপাসিটি চার্জের কম হারে কেন্দ্রগুলো চুক্তি নবায়নে রাজি ছিল না কোম্পানিগুলো। এজন্য কয়েক দফা মিটিং করেও চুক্তি নবায়নের শর্ত চূড়ান্ত করা যায়নি।

সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি কেন্দ্রগুলোর চুক্তি নবায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সভা আহ্বান করা হয়। তবে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো ওই বৈঠক বাতিল করে। তাদের লক্ষ্য ছিল নতুন চেয়ারম্যান আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। নতুন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১ ফেব্রুয়ারি। এরপরই তিনি রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর চুক্তির শর্ত অনুমোদন করেন।

এ বিষয়ে জানতে মো. মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দরকষাকষি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত পিডিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, নবায়ন প্রক্রিয়ায় থাকা রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর মালিকানা দেশের শক্তিশালী তিনটি গ্রুপের হাতে রয়েছে। সে কারণে চাইলেও এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু করার ছিল না। তাই তাদের শর্ত মেনে নিয়ে দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কোনো ধরনের ঋণ বা দায় (লায়াবিলিটি) নেই। তাই তাদের এত বেশি পরিমাণে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে শেষ পর্যন্ত না করা গেল না। আর চাহিদা না থাকায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনার গ্যারান্টি দেয়ারও কথা ছিল না। তবে কোম্পানিগুলোর চাপের কারণে সে দাবিও মেনে নিতে হয়েছে।

চুক্তির শর্তমতে, পাঁচ কেন্দ্রের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ৪৫৫ মেগাওয়াট। এতে দৈনিক মোট মেগাওয়াটপ্রতি ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে ১২ হাজার ৬৫৮ ডলার। আর বছর গুনতে হবে ৪৬ লাখ ২০ হাজার ২০৭ ডলার বা ৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি।

বর্তমানে চুক্তি নবায়নের প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগে। সেখান থেকে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। ওই কমিটির অনুমোদনের পর চুক্তি নবায়ন করা হবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বাড়তে বাড়তে ৩০ ডলার/এমএমবিটিইউ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তবে এখন দাম হ্রাস পাচ্ছে। আগামীতে আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এলএনজির দাম আরও কমে ১৫ ডলারে নেমে আসে, তাহলে আরও তেলচালিত কেন্দ্র দরকার হবে না। বরং গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কম পড়বে। আর যদি দাম খুব একটা না কমে তাহলে ফার্নেস অয়েলেই সাশ্রয় হবে। তাই কেন্দ্রগুলোর কতটুকু ব্যবহার হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এদিকে বর্তমানে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এতে সক্ষমতার বড় একটি অংশ বসে থাকছে। পিডিবির সর্বশেষ তথ্যমতে, গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ২০ হাজার ৯৮৫ মেগাওয়াট। আর গ্রীষ্মে সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াতে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। যদিও শীতের কারণে বর্তমানে চাহিদা আট হাজার মেগাওয়াটের মধ্যেই থাকছে। তাই চুক্তি নবায়নের দরকার ছিল না।

উল্লেখ্য, দরপত্র আহ্বান ছাড়াই রেন্টাল কেন্দ্র পাঁচটি বিদ্যুৎ খাতের বিশেষ বিধানের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছিল। এগুলো উৎপাদনে আসে ২০১১ সালে। তবে ২০১৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্রগুলোর চুক্তি নবায়ন করা হয়। গত অর্থবছর সবক’টির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে কেপিসিএল এবং সামিট পাওয়ার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০