তামাক কর বাড়ালে বাড়তি রাজস্ব আসবে ৯ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক:‘বর্তমান তামাক কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল, যা তামাকের ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণের পথে একটি বড় বাধা। এ জন্য কর কাঠামোকে সহজ করতে হবে। এটা করে যথাযথ পদ্ধতিতে তামাক-কর বাড়ানো হলে তামাকের ব্যবহার কমাতে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি বাড়তি রাজস্ব আহরণ হবে।’

তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় এ অভিমত দেন বক্তারা।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সহ-সভাপতি শফিকুল আলমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশেদুল ইসলাম। ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো. শরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের পরিচালক (গবেষণা) আবদুল্লাহ নাদভী।

২০২২-২৩ অর্থবছরে শতকরা হিসেবে নিন্ম স্তরের সিগারেটের দাম সর্বোচ্চ পরিমাণে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। কারণ ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব অনুসারে মোট যে সিগারেট বিক্রি হয় তার সবচেয়ে বড় অংশ (৭৫ শতাংশ) হলো নি¤œ স্তরের সিগারেট।

প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ফলাফল হিসেবে বলা হয়, সরকার যদি তামাক কর বৃদ্ধি করে, তবে সিগারেট ব্যবহারকারীর অনুপাত ১৫ দশমিক এক শতাংশ থেকে ১৪ দশমিক শূন্য তিন শতাংশে হ্রাস পাবে। ১৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক সিগারেট ব্যবহার ছেড়ে দেবেন ও ৯ লাখ তরুণ সিগারেট ব্যবহার শুরু করা থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়া ৮ লাখ ৯০ হাজার অকাল মৃত্যু রোধ করা যাবে। আর ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে সিগারেট খাত থেকে।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, অসংক্রামক ব্যধির প্রাদুর্ভাব বিশ্বের যেসব দেশে বেশি তাদের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। উপরন্তু অসংক্রামক ব্যাধির অন্যতম কারণ হিসেবে তামাক গ্রহণকে ধরা হয়। এ জন্য তামাকের ব্যবহার হ্রাসের জন্য তামাকের কর বৃদ্ধি অনুষঙ্গ। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাংবাদিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে তামাকের কর বৃদ্ধির জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশেদুল ইসলাম বলেন, গণমাধ্যম সবসময় জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিষয়কে ফোকাস করে। তামাকবিরোধী কার্যক্রমে গণমাধ্যম তাই অংশীদার হিসেবেই পাশে থাকবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে বিভিন্ন সভাতেও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম সব সময়ই জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়কে হাইলাইট করে। আগামীতেও আমরা সক্রিয়ভাবে পাশে থাকব।

বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে তামাকের কর কাঠামো জটিল। তামাক পণ্যের ধরন, বৈশিষ্ট্য, দামের স্তর অনুসারে শুল্ক হারের ভিন্নতা রয়েছে। ফলে তামাকপণ্য সহজলভ্য থেকে যাচ্ছে তামাক ব্যবহারের হারও প্রায় অপরিবর্তিত থাকছে। প্রস্তাবিত সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্কের ফলে সিগারেটের কর কাঠামো সহজ হবে। মূল্যস্ফীতি ও বর্ধমান আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সময়ে সময়ে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো যাবে। আরও কার্যকরভাবে রাজস্ব প্রাক্কলন করা সম্ভব হবে।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সহ-সভাপতি শফিকুল আলম বলেন, আমরাও দেশকে তামাকমুক্ত দেখতে চাই। এ জন্য কার্যকর বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণে জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে তামাক কর বৃদ্ধির বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে সরকারের নজরে আনা জরুরি। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্যরা তামাকবিরোধী কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে পাশে থাকবে বলে এ সময় তিনি আশ্বস্ত করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০