নিজস্ব প্রতিবেদক: তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় নিন্মস্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণসহ সব তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা)। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এসব দাবি জানানো হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সভায় আত্মা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, দাবি বাস্তবায়ন করা হলে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে এবং ৪ লাখ ৪৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক ও ৪ লাখ ৪৮ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকাল মৃত্যু রোধ হবে।
বাংলাদেশে এখনও প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করেন, তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের দাম বেশি হলে তরুণ জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত হয় এবং তামাক আসক্তরাও বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী তামাক ছাড়তে উৎসাহিত হয়।
সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘তামাকজনিত স্বাস্থ্য ব্যয় যে অনেক বেশি তা আমরাও জানি। কর ও দাম বৃদ্ধির সঙ্গে আরও অন্যান্য বিষয় জড়িত। তবে আমরা
চাই তামাক ব্যবহার কমে আসুক। অন্যান্য খাত থেকে আমাদের রাজস্ব আসবে। সবদিক ভেবেই আত্মা’র প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হবে।’
সভায় নিন্মোক্ত দাবি তুলে ধরা হয় ন্মো
আত্মার প্রস্তাবে বলা হয়, সব সিগারেট ব্র্যান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা। যাতে নিন্মস্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৮.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক করা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
আরও বলা হয়, ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫%) সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা। ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বৃদ্ধিসহ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ শুল্ক (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬০%) প্রচলন করা, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল থাকবে।
সভায় বলা হয়, এসব দাবি তামাক-কর ও মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ১৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে, দীর্ঘমেয়াদে ৪ লাখ ৪৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লাখ ৪৮ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সরকারের ৯ হাজার ২০০ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে এ বাজেট প্রস্তাব বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে আত্মা।