শেষের রোমাঞ্চে শিরোপা কুমিল্লার

ক্রীড়া প্রতিবেদক: শেষ ২০ বলে ১৮ রান দরকার, উইকেট ছিল পাঁচটি। এ সহজ সমীকরণ মেলাতে পারেনি বরিশাল। বরং তিন উইকেট হারিয়ে ১৬ রান তোলে সাকিব আল হাসানের দল। এতে এক রানের রোমাঞ্চকর জয় পায় কুমিল্লা। ফলে ২০১৯ সালের পর আবারও চ্যাম্পিয়ান হলো কুমিল্লা।

কভিড সংক্রমণ শুরুর পর বিপিএলের গত আসর অনুষ্ঠিত হয়নি। এর আগে ২০২০ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রাজশাহী রয়েলস। এবারের আসরে রাজশাহী নেই। তার পরিবর্তে ঢুকেছে বরিশাল। তবে আশা জাগিয়েও তা শেষ হয়ে গেল। আর এ নিয়ে ঢাকার সঙ্গে যৌথভাবে তিনবার বিপিএলের শিরোপা ঘরে তুলল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তবে বিপিএলের প্রথম দুই আসরে ঢাকার নাম ছিল ঢাকা গ্লাডিয়েটরস। পরে ফ্রাঞ্চাইজি পরিবর্তন হয়ে ঢাকার নাম হয় ঢাকা ডিনামাটস।

গতকাল বিপিএলের অষ্টম আসরের ফাইনালে চাপ ছাড়া ব্যাটিং করতে টস জিতে ব্যাটিংই বেছে নিয়েছিলেন কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। আর সুনীল নারাইনের ব্যাটিংয়ে চাপে পড়ে বরিশাল। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের মতো এবারও নারাইন কুমিল্লাকে এনে দিলেন দুর্দান্ত শুরু। আগের ম্যাচে ১৬ বলে ৫৭ রানের পর এবার নারাইন ৫৭ রান করলেন ২৩ বলে।

তবে তার উইকেটের পরই বরিশালের দুর্দান্ত বোলিংয়ে পথ হারায় কুমিল্লা। সপ্তম উইকেটে মঈন আলী ও আবু হায়দারের ৫১ বলে ৫৩ রানের জুটিতে ভর করে কুমিল্লা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত যেতে পেরেছে ১৫১ রান পর্যন্ত।

আগের ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন, গতকাল নারাইন শুরু করেছেন সেখান থেকেই। মুজিব উর রেহমানের করা প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে সোজা ছয়ে ঝড় শুরু তার। সে ওভারে ওঠে ১৮ রান, পরের ওভারে শফিকুল ইসলামের কাছ থেকেও আসে ১৮ রান। জায়গা পেলে তো কথাই নেই, নারাইন জায়গা বানিয়ে নিয়েও খেলেছেন শট। এক্সট্রা কাভার, মিডউইকেট, লং অনÑনারাইনের শট গেছে সব দিকেই।

নারাইন-ঝড় থামাতে তৃতীয় ওভারেই আসেন সাকিব। ‘কাক্সিক্ষত’ উইকেটটা না পেলেও প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন লিটন দাসকে ফিরিয়ে। ঝুলিয়ে দেয়া বলে সøগ করতে গিয়ে মিস করেন লিটন, বোল্ড হলেন ৬ বলে ৪ রান করেই। প্রথম কোয়ালিফায়ারে ৩৫ বলে ৩৮ রান করার পর দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ব্যর্থ লিটন ফাইনালেও রান পেলেন না।

সাকিবের পর ডোয়াইন ব্রাভো এসে দেন ৬ রান। তবে নারাইন থামেননি এরপরও। পরের ওভারে সাকিব এলে শুরুতে চড়াও হন মাহমুদুল, সেখান থেকে টানেন নারাইন। সাকিব এবার দেন ১৬ রান। সে ওভারেই টানা দ্বিতীয় অর্ধশতক পেয়ে যান নারাইন, অবশ্য আগের ম্যাচের চেয়ে (১৩ বল) তুলনামূলক ধীরগতিতে এবারের অর্ধশতকÑগতকাল নারাইনের লেগেছে ২১ বল। বরিশালকে যেন ধন্দে ফেলে দিয়েছিলেন এ ক্যারিবীয়, ফিল্ডিং সেট করতেও সাকিবকে সময় নিতে হচ্ছিল বেশ।

নারাইন অবশেষে থামেন মেহেদী হাসান রানাকে তুলে মারতে গিয়ে, লং অনে ক্যাচ দিয়ে। ফেরার আগে ৫টি করে চার ও ছয়ে ২৩ বলে করেন ৫৭ রান। পাওয়ার প্লে-তে কুমিল্লা তোলে ৭২ রান। তবে নারাইন ফেরার পর কুমিল্লাকে চেপে ধরে বরিশাল। পাওয়ারপ্লের পরের ৫ ওভারে ওঠে ২২ রান, এ সময়ে কুমিল্লা হারায় ৪ উইকেট।

প্রথমে পয়েন্টে ব্রাভোর দারুণ ফিল্ডিংয়ে রানআউট হন মাহমুদুল হাসান। মুজিব পরের ২ ওভারে নেন আরও ২ উইকেটÑক্যারম বলে ফাফ ডু প্লেসি ফিরতি ক্যাচ দেয়ার পর বোল্ড হন আরিফুল হক। এ দুজনের মাঝে ব্রাভোর শর্ট বলে অধিনায়ক ইমরুল কট বিহাইন্ড হলে চাপ আরও বাড়ে কুমিল্লার।

দ্রুত উইকেট পতনে বাধ দেয়ার পাশাপাশি দ্রুত রান তোলার দ্বিমুখী চাপের মুখে পড়েন এরপর টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান মঈন। আবু হায়দারকে নিয়ে শুরুতে জুটি গড়ার দিকেই মনোযোগ ছিল তারÑপ্রথম ২০ বলে করেন মাত্র ১৬ রান। ১৬তম ওভার শেষে কুমিল্লার স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ১১৯ রান।

স্ট্র্যাটেজিক টাইম-আউটের ঠিক পরের ওভারের প্রথম বলেই শফিকুলকে কাট করে চার মেরে আশা জুগিয়েছিলেন মঈন, যদিও সে ওভারে ৭ রানের বেশি আসেনি। পরের ওভারের প্রথম বলে মেহেদী রানাকে মঈন মারেন ছয়, শেষ বলে গিয়ে মারেন আবু হায়দার। তবে ১৯তম ওভারে ব্রাভো এসে আবার দেখান পেসের বৈচিত্র্য, মঈন-আবু হায়দার সেটি সামলে ৭ রানের বেশি তুলতে পারেননি।

শেষ ওভারের প্রথম বলে ডিপ এক্সট্রা কাভারে সাকিবের হাতে বল রেখে দুই রান চুরি করতে গিয়ে রানআউট হয়ে ফেরেন মঈন, ৩২ বলে ৩৮ রান করে। তৃতীয় ও চতুর্থ বলে আবু হায়দারের পর শহীদুল ইসলামকেও ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে যান শফিকুল, অবশ্য শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। কিন্তু শেষ ওভারে ২ রান ও ৩ উইকেট বোলিংয়ে বরিশালের দাপটের প্রতিফলনই ছিল সেটি।

ব্যাটিংয়ে নেমে শূন্য রানে মুনিম শাহরিয়ার ফিরে গেলেও সে ধাক্কা ভালোভাবেই সামাল দেয় বরিশাল। তবে সৈকত আলীর ৩৪ বলে ৫৮ রানের ঝলমলে ইনিংসের পাশে ক্রিস গেইলের ৩১ বলে ৩৩ রানের ইনিংসটা ধীরগতিরই ছিল। একসময় ১২ ওভার ৫ বলে তিন উইকেট হারানোর পরও বোর্ডে ১০৭ রান জমা করে জয়ের সুবাতাসই পাচ্ছিল সাকিবের বরিশাল। এরপর বরিশালের আর কেউ ২০ পেরুনো ইনিংসও খেলতে পারেননি।

তবে নুরুল হাসানের ১৩ বলে ১৪ বা নাজমুল হোসেন শান্তের ১৫ বলের ১২ রানের ইনিংসে জয়ের কাছাকাছি এসে পড়ে বরিশাল। তবে ১৮ ও ১৯তম ওভারে সুনীল নারাইন ও মোস্তাফিজুর টাইট বোলিংয়ে ১৮ বলে ১৮ রানের লক্ষ্যটা দাঁড়ায় ৬ বলে ১০-এ। তবে শেষ ওভারে ৮ রান বোর্ডে তুলতে সক্ষম হয় বরিশালের শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা। উল্টো সহিদুল ইসলামের করা পঞ্চম বলে ক্যাচ তুলে দিলেও তা মিস হয়। এতে শেষ বলে তিন রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি বরিশাল। উল্টো দুই রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে ম্যাচকে সুপার ওভারে নেয়ার শেষ চেষ্টাকে শেষ করে দেয় দলটি। আর এক রানের রোমাঞ্চকর জয় পয় কুমিল্লা।

স্কোর: কুমিল্লা ১৫১/৯ (২০ ওভার)

বরিশাল ১৫০/৮ (২০ ওভার)

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০