স্বল্প জন্ম ওজনের ও আমিষ ক্যালরি ঘাটতিজনিত অপুষ্টিগ্রস্ত শিশুর বৃদ্ধিতে জিংক সাহায্য করে। শিশু যখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়, তখন তাকে খাওয়ার স্যালাইন ও জিংক দিতে বলা হয়।
মানুষের শারীরবৃত্তীয় কাজে অসংখ্য রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, এর সঙ্গে ৯০-এর বেশি উৎসেচক বা এনজাইম জড়িত, যেগুলোর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো দস্তা বা জিংক। এ ছাড়া জিংক শরীরের কোষকলার গাঠনিক কাঠামো বজায় রাখা এবং শর্করা, চর্বি ও আমিষের বিপাক প্রক্রিয়ায় ভূমিকা পালন করে। গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে জিংকের বিশেষ ভূমিকা আছে। শরীরে জিংকের স্বাভাবিক পরিমাণ ২ থেকে ৩ গ্রাম। দস্তা শরীরের বিশেষ কোনো কোষকলায় অতিরিক্ত পরিমাণে জমা থাকে না। ফলে নিয়মিত বাইরে থেকে শরীরে সরবরাহ করার প্রয়োজন পড়ে।
জিংকের প্রধান খাদ্য উৎস: দানা শস্য ও উপজাত খাদ্য, ডাল ও সয়াবিন, মাংস ও ডিম, কলিজা, ডিমের কুসুম, মাছ, শাক, ফল, দুধ, বাদাম ইত্যাদি খাবারেও জিংক পাওয়া যায়।
শিশুর দেহে জিংক ঘাটতির কারণ: অরুচি, আন্ত্রিক রোগ, যকৃতের রোগ, পুড়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদি জ্বর প্রভৃতি কারণ থাকতে পারে।
জিংক ঘাটতিজনিত সমস্যা: জিংকের অভাবে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, জš§কালীন শারীরিক ত্রুটি, রোগপ্রতিরোধী শক্তি কমে যাওয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, চর্মরোগ, উদরাময় রোগ, খাবারে অরুচি, রাতকানা প্রভৃতি হতে পারে। তবে শিশু জিংক ঘাটতিজনিত সংকটে পড়লেও দৈহিক উপসর্গ তাৎক্ষণিকভাবে দৃশ্যমান না-ও হতে পারে।
জিংকের ব্যবহার: ‘উইলসন ডিজিজ’ নামের একটি জš§গত রোগ সরাসরি জিংকের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। স্বল্প জš§ ওজনের ও আমিষ ক্যালরি ঘাটতিজনিত অপুষ্টিগ্রস্ত শিশুর বৃদ্ধিতে জিংক সাহায্য করে। শিশু যখন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়, তখন তাকে খাওয়ার স্যালাইন ও দুই সপ্তাহের জন্য জিংক দিতে বলা হয়। এ ছাড়া শিশু যখন টিপিএন, হেপাটাইটিস, এক্রোডারমাইটিস এনটেরোপ্যাথিকা (জেনেটিক রোগ) প্রভৃতিতে ভোগে, তখন জিংক ঘাটতিতে পড়ে।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী
সাবেক বিভাগীয় প্রধান
শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল