বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ফয়েজ আহমদ। তিনি ১৯২৮ সালের ২ মে মুন্সীগঞ্জের বাসাইলভোগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কলকাতার ‘সওগাত’ পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। তিনি পাকিস্তান সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ফয়েজ আহমদ ১৯৪৮ সালে মূল ধারার সাংবাদিকতা শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রথম প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন। পরে দৈনিক বঙ্গবার্তার প্রধান সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। সাংবাদিকতা করার সময় থেকে তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হন। ফয়েজ আহমদ ১৯৫০ সালে ‘হুল্লোড়’ এবং ১৯৭১ সালে ‘স্বরাজ’ পত্রিকার সম্পাদক হন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রথম প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ, পূর্বদেশ, সাপ্তাহিক ইনসাফ ও ইনসান এবং দৈনিক বঙ্গবার্তায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। আশির দশকে ফয়েজ আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন। তিনি পাকিস্তান আমলে ১৯৫২ সাল থেকে ৪ বছর ও সামরিক শাসক এরশাদের আমলে একবার কারাবন্দি থাকেন। এ ছাড়া রাজনৈতিক কারণে ৩ বার দীর্ঘ সময়ের জন্য তাকে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকতে হয়েছে। তিনি জাতীয় কবিতা উৎসবের একাধারে প্রথম পাঁচ বছর আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি বাংলা একাডেমির কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হন। ফয়েজ আহমদ ১৯৯২ সালে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচারের লক্ষ্যে গঠিত গণআদালতের ১১ বিচারকের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ঢাকার প্রাচীন আর্ট গ্যালারি ‘শিল্পাঙ্গন’। তিনি প্রগতিশীল পাঠাগার ‘সমাজতান্ত্রিক আর্কাইভ’-এর প্রতিষ্ঠাতা। ফয়েজ আহমদ শিশু-কিশোরদের জন্য ছড়া ও কবিতা লিখেছেন। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১০০টি। এর মধ্যে ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ সবচেয়ে বিখ্যাত। এ ছাড়া তিনি চীনসহ বিভিন্ন দেশের পাঁচটি বই অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে ‘হোচিমিনের জেলের কবিতা’ উল্লেখযোগ্য। ফয়েজ আহমদ ১৯৭৬ সালে শিশু-সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯১ সালে সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য একুশে পদক লাভ করেন। তিনি ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
