২১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ১৯৫২। সকাল থেকে চার-পাঁচজন করে ছাত্র ঢাকা মিডিকেল কলেজ এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। আমতলা মধুর রেস্তোরাঁ, মেডিকেল ব্যারাক ছাত্র জমায়েতে একাকার। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে মিছিল বের করেন। পুলিশ মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। অনেকেই গুলিতে শহিদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বার, সালাহউদ্দিন। আরও কয়েকজন তরুণ শহিদ হন, যাদের পরে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
শহিদ রফিকউদ্দিন আহমেদ: ভাষা আন্দোলনে প্রথম শহিদ। জগন্নাথ কলেজে অধ্যয়নকালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিলে অংশ নেন তিনি। মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। গুলিতে তার মাথার খুলি উড়ে গেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সাত দিন আগে তার বিয়ে পাকাপাকি হয়।
শহিদ আব্দুস সালাম: ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার লক্ষ্মণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাবেশ ও মিছিলে যোগ দেন। পুলিশের গুলিতে আহত সালাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।
শহিদ আবুল বরকত: ১৯২৭ সালের ১৩ জুন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র বরকত ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিলে অংশ নেয়। ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ গুলি চালালে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। অনেকেই মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে আশ্রয় নেন। মেডিকেল হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় বরকত পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন।
শহিদ শফিউর রহমান: ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কোন্নগাঁও জন্মগ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারির পর দিনও ছাত্রদের আন্দোলন চলছিল। ২২ ফেব্রুয়ারি শফিউর অফিসে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিবর্ষণে মৃত্যুবরণ করেন।
শহিদ আব্দুল জব্বার: ১৯১৯ সালের ১০ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি তিনি শাশুড়িকে হাসপাতালে ভর্তি করে মেডিকেলের ছাত্র হেস্টেলে ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের হলে তিনিও মিছিলে যোগ দেন। এ সময় পুলিশের গুলিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তা ছাড়া সে সময় দৈনিক আজাদের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি গুলিতে ৯ ব্যক্তির মৃত্যুর উল্লেখ আছে। সেদিন বহু লাশ গুম করে ফেলা হয়।
কাজী সালমা সুলতানা