প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সম্পাদক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। তিনি ১৯২৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার দুর্গাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৫ সালে যশোর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মানসহ এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ সালে সরকারি বৃত্তি নিয়ে অক্সফোর্ডে ভর্তি হন। অক্সফোর্ড থেকে দেশে ফেরার পর তিনি ঢাকা কলেজে প্রফেসর পদে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে লেকচারার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত মুস্তাফা নূরউল ইসলামের সঙ্গে মিলে প্রকাশ করেন ত্রৈমাসিক ‘পূর্বমেঘ’। ১৯৬৭ সালে তিনি মিল্টনের বিখ্যাত গদ্যরচনা অ্যারিওপ্যাজিটিকার অনুবাদ করেন। ১৯৭৪-৭৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের খণ্ডকালীন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। সেখানে পরপর দুই মেয়াদে ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত উপাচার্য ছিলেন জিল্লুর রহমান। তিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০০ সাল থেকে তিন বছর গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাযের্র দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯০-৯১ সালে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেও মূল্যবান অবদান রেখেছেন সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় সপ্রতিভ বিচরণ ছিল তার। লিখেছেন প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, কবিতা। অনুবাদ করেছেন ইংরেজি সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য অনেক বই। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে কবিতা : হৃদয়ে জনপদে, চাঁদ ডুবে গেলে, আসন্ন বাস্তিল, কবিতা সংগ্রহ; প্রবন্ধ : আমার দেশ আমার ভাষা, শব্দের সীমানা, শান্তিনিকেতনে তিন মাস, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ছিলাম, গ্রামের নাম খিদিরপুর; অনুবাদ: অ্যারিওপ্যাজেটিকা, স্যামসন অ্যাগনিমটিজ মিল্টন, শেক্সপিয়রের সনেট, দ্য টেম্পেস্ট শেক্সপিয়র ; সম্পাদনা : বাংলা একাডেমি ইংলিশ-বেঙ্গলি ডিকশনারি; আত্মজীবনী: আমার চলার পথে, প্রবাসে প্রতিদিন ভ্রমণ প্রভৃতি। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, কাজী মাহবুবুল্লাহ বেগম জেবুন্নিসা ট্রাস্ট অ্যাওয়ার্ড, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, এম.এ. হক স্বর্ণপদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কার পান। ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা