জয়নাল আবেদিন: দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিং। বাড়ছে ঋণ বিতরণও। পাশাপাশি তাল মিলিয়ে বাড়ছে আমানত সংগ্রহের পরিমাণ। তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে এজেন্টের মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ। অন্যদিকে ঋণ বিতরণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে এজেন্টের মাধ্যমে দুই লাখ ৪১ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছে ব্যাংকগুলো। এক বছর আগে আমানতের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৯ হাজার কোটি। অন্যদিকে ঋণ বিতরণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। তথ্যমতে, ২০২১ সালে এজেন্টের মাধ্যমে তিন হাজার ৮৬১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এক বছর আগে এক হাজার ৫৪৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকগুলো।
গত ডিসেম্বরে এজেন্টের মাধ্যমে ২৪ হাজার ৫৪ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছে ব্যাংক। অন্যদিকে ঋণ বিতরণ করেছে ৫২২ কোটি টাকা। বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, ক্রমেই বড় হচ্ছে এই দুই সূচকের অঙ্ক।
করোনা মহামারির মধ্যে ব্যাংকগুলোর শাখা সম্প্রসারণ কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে এ সময়ে অনলাইন লেনদেনে আগ্রহ বাড়ায় ব্যাংকগুলো এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড লেনদেনে মনোযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি শাখার খরচ কমাতে উপশাখা বাড়ানোর বিষয়েও জোর দিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে চার লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর আগের বছর এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লেনদেন ছিল দুই লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসেবে আলোচিত বছরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা।
করোনার প্রথম বছরের শাখা সম্প্রসারণ বড় ধরনের ধাক্কা খেলেও দ্বিতীয় বছরে তা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে ব্যাংকগুলো। তারপরও করোনা-পূর্ববর্তী সময়ের মতো ব্যাংক শাখা খোলা এখনও শুরু হয়নি। তবে এজেন্ট ব্যাংকিং, উপশাখা, মোবাইল ব্যাংকিং, অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) বুথ, বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিন, ক্যাশ রিসাইকেলার মেশিন (সিআরএম) ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ব্যাংকের গ্রাহকের লেনদেন বাড়ার তথ্য জানান দিচ্ছে, শাখায় না গিয়েও তারা ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছেন।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে মাত্র একটি ছাড়া সব ব্যাংক শাখাই পুরোপুরি অনলাইনে চলে এসেছে। ফলে করোনায় ব্যাংকের শাখা সম্প্রসারণ বিগত বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা কম থাকলেও গ্রাহকরা লেনদেনে পিছিয়ে নেই। তারা আগে যেসব লেনদেনের জন্য ব্যাংক শাখায় আসতেন, এখন সেসব খুচরা অনেক লেনদেন তারা ঘরে বসেই করছেন, বা এজেন্ট ব্যাংকিং বা উপশাখা থেকেও ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন গ্রাহকরা।
ফলে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকের গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেনের এ আগ্রহকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে শাখা খোলার গতি অনেক বেড়েছে। যদিও করোনা-পূর্ববর্তী সময়ে শাখা সম্প্রসারণের গতি আরও বেশি ছিল। তারপরও বর্তমানে যেহেতু ব্যাংকের উপশাখা এবং এজেন্ট পয়েন্ট থেকে অনেক ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে, সেহেতু শাখার বিকল্প দাঁড়িয়ে গেছে। ফলে আগের মতোই যে শাখা বাড়াতে হবে, তারও আর প্রয়োজন নেই বলেও মত বিশেষজ্ঞদের।
গত বছরে এটিএম বুথ, পিওএস মেশিন, সিআরএম ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ব্যাংক গ্রাহকরা মোট দুই লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন করেন। ২০২০ সালে এ চারটি বিকল্প ডেলিভারি চ্যানেলে ব্যাংকের গ্রাহকরা লেনদেন করেন এক লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছর এ চারটি প্ল্যাটফর্মে ব্যাংকের লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, ২০২১ সালে ব্যাংকের গ্রাহকরা ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে লেনদেন করেছেন এক লাখ ৫৬ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালে ইন্টারনেট ব্যাংকিং লেনদেন ছিল ৭৯ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। সেই হিসেবে আলোচিত বছরে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের লেনদেন বেড়েছে ৭৭ হাজার কোটি টাকা।
আলোচিত বছরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সাত লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন করেছেন গ্রাহকরা। ২০২০ সালে এ লেনদেন ছিল পাঁচ লাখ ৬১ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এক বছরে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার লেনদেন বেড়েছে দুই লাখ আট হাজার ৬০৪ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংকের অনেক সেবাই এখন এজেন্টের মাধ্যমে পাওয়া যায়। তাই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার বাড়ছে। এখানে নিয়মিত লেনদেন, রেমিট্যান্স সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ ও আমানতের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি হলেও সেক্টরটির আকার বেশি বড় নয়।
তিনি আরও বলেন, এ মার্কেট নিয়ে অনেক কিছু করার আছে। ব্যাংকের একটি শাখার চেয়ে এজেন্টের খরচ ১০ ভাগের এক ভাগ। তাই ব্যাংকগুলোও এজেন্টে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এজেন্ট বুথের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি করতে চান অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার। গ্রামাঞ্চলে এজেন্ট বুথের ব্যবহার বাড়িয়ে এই খাতের ঋণের অঙ্ক বড় কারার আশা ব্যক্ত করেন তিনি।