হচ্ছে না পিপলস ব্যাংক

শেখ আবু তালেব: ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে দুটি ধাপের প্রথমটি অতিক্রম করেছিল প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকটির নামে কোম্পানি গঠন ও মূলধন সংগ্রহের জন্য অনুমোদন হিসেবে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) পেয়েছিল। কিন্তু সেই এলওআই বাতিল করে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক বিবেচনায়-আলোচনায় থাকা প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের মৃত্যু ঘটল। ব্যাংকটি আর আলোর মুখ দেখছে না।

প্রাথমিক অনুমোদন পাওয়ার পরই নানা ধরনের বিতর্ক ও সমস্যার জন্ম দেয় ব্যাংকটি। একাধিকবার সময় নেয়া হয় ব্যাংকটির চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে। শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানকে সংযুক্ত করে ঢেলে সাজানো হয় পরিচালনা পর্ষদ। নেয়া হয় নতুন নতুন উদ্যোক্তা পরিচালক। পুরোনোদের মধ্য থেকে মাত্র দুজনকে রেখে ২৩ উদ্যোক্তাই নতুন করে আনা হয়। কিন্তু তার পরও শেষ রক্ষা হলো না ব্যাংকটির।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এলওআই পাওয়া প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এলওআই বাতিলের বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে পিপলস ব্যাংক নামে কোনো ব্যাংক চালু হচ্ছে না দেশে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর (ডিজি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রস্তাবিত ব্যাংকটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারেনি, নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধি করার আবেদনও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গ্রহণ করেনি। এতে তাদের দেয়া লেটার অব ইনটেন্টটি (এলওআই) বাতিল হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি তাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।’

সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের সঙ্গে নতুন সম্পৃক্ত হওয়াদের ব্যাংকের অনুমোদন দিতে প্রক্রিয়ার প্রথম থেকেই শুরু করতে হবে। নতুন নাম দিয়ে আবেদন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আগের সময়ে যতটা সহজ ছিল, সম্পূর্ণ নতুন প্রক্রিয়ায় ততটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ দেশের অর্থনীতি করোনার মতো মহামারির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আর সামনে জাতীয় নির্বাচন চলে এসেছে। এ সময়ে সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন করে ব্যাংকের অনুমোদন দেয়ার মতো ঝুঁকি নেবে না।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক ও পিপলস ব্যাংককে লেটার অব ইনটেন্ট দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সব অনুমোদন দেয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। এলওআই পেয়ে প্রস্তাবিত ব্যাংকের নামে কোম্পানি গঠন ও প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ শুরু করে ব্যাংকগুলো।

যদিও এরই মধ্যে দুটি ব্যাংক চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আবুল কাশেমের উদ্যোগে লেটার অব ইনটেন্ট পাওয়া পিপলস ব্যাংক প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারেনি। বর্তমানে ব্যাংকের অনুমোদন পেতে হলে ১০ লাখ টাকা দিয়ে আবেদন করতে হয়। নতুন ব্যাংকের অনুমোদন পেতে পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে সম্প্রতি। এ জন্য প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকেও বলা হয় মূলধন ৫০০ কোটি টাকা করতে।

এ শর্ত পূরণে ব্যাংকটির উদ্যোক্তারা অর্থ দেখালেও তার বৈধ উৎস দেখাতে পারেনি অনেকেই। জানা গেছে, আবেদনের সময়ে উদ্যোক্তাদের প্রথম দিকে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেরই বৈধ আয়ের উৎস দেখাতে পারেননি। আবার কয়েকজনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগও ছিল। এভাবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে কয়েক দফায়। এমনকি প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকেও বলা হয়েছে, তার প্রদর্শিত পুরো অর্থ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বৈধভাবে অনুমোদন নিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনতে হবে।

আবুল কশেমের প্রদর্শন করা অর্থের মধ্যে মাত্র ৫৬ লাখ টাকার উৎস বৈধভাবে দেখতে পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় পড়ে যাওয়ায় এতে আপত্তি তোলে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে শর্ত পূরণ ও প্রয়োজনীয় মূলধন জোগাতে সময় চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করে পিপলস ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকও সাড়া দিয়ে সময় বৃদ্ধি করে একাধিকবার। সর্বশেষ সময় বৃদ্ধির মেয়াদ শেষ হয় গত ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারেননি পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তারা।

শেষ রক্ষা করতে উদ্যোক্তা হিসেবে সংযুক্ত করা হয় ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানকে। তিনি ও তার মা শিরিন আক্তারকে উদ্যোক্তা পরিচালক হিসেবে রাখা হয়। সাকিবের পক্ষ থেকে ব্যাংকটিতে ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়। ব্যাংকটির অনুমোদন দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন সাকিব আল হাসান। এ জন্য নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহে ফের নতুন করে তিন মাস সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল পিপলস ব্যাংকের পক্ষ থেকে।

জানা গেছে, সময় বৃদ্ধির ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল আগের উদ্যোক্তাদের মধ্যে মাত্র একজন আবুল কাশেম ছাড়া নতুন ২৩ পরিচালককে যুক্ত করা হয়েছে। তাদের নামেই ব্যাংকটির অনুমোদন দেয়া হোক। এ জন্য প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে ব্যাংকটির তিন মাস সময় প্রয়োজন। কিন্তু গত ১৭ জানুয়ারি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বাতিল হয়ে যায় এলওআইর কার্যকারিতা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারেনি। সময় বৃদ্ধির বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ অনুমোদন করেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাদের এলওআই বাতিল হয়ে গেছে। পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তটি তাদের জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০