আন্দোলনের শুরু নারীদের ভূমিকা সাহসিকতায় পূর্ণ

কাজী সালমা সুলতানা: ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নারীদের ভূমিকা সাহসিকতায় পূর্ণ। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তমদ্দুন মজলিস গঠিত হয়। সে সময় নারী ভাষাসৈনিকদের মধ্যে আবুল কাশেমের স্ত্রী রাহেলা, বোন রহিমা এবং রাহেলার ভাইয়ের স্ত্রী রোকেয়া আন্দোলনকারী ছাত্রদের আজিমপুরের বাসায় দীর্ঘদিন রান্না করে খাওয়ান। ১৯৫২ সালের ২৩ জানুয়ারি রাত ৪টার দিকে আবুল কাশেমের বাসা ঘিরে ফেলে পুলিশ। বাসার ভেতরে তখন আবুল কাশেম ও আব্দুল গফুরসহ অন্যরা ভাষা আন্দোলনের মুখপাত্র সৈনিক পত্রিকা প্রকাশের কাজে ব্যস্ত ছিল। পুলিশ দরজায় বারবার আঘাত করলে রাহেলা কাশেম গভীর রাতে পারিবারিক বাসায় পুলিশের প্রবেশের চেষ্টার বিরুদ্ধে পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এই সুযোগে আবুল কাশেমসহ অন্যরা পেছনের দেয়াল টপকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপর পুলিশ ভেতরে ঢুকে কাউকে না পেয়ে চলে যায়।

ভাষার দাবির মিছিলগুলোয় পাকিস্তান আর্মি ও পুলিশের বন্দুকের নলকে উপেক্ষা করে তারা সাহসিকতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করে। বায়ান্নর একুশের প্রতিবাদ মিছিল থেকে মমতাজ বেগমের ছাত্রী ইলা বকশী, বেনু ধর ও শাবিনার মতো কিশোরীদের পুলিশ সেদিন গ্রেপ্তার করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ছাড়াও জগন্নাথ কলেজসহ স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা  ব্যাপকভাবে সব কর্মসূচিতে অংশ নেন। ঢাকার বাইরে সিলেট কুলাউড়ার সালেহা বেগম ময়মনসিংহ মুসলিম গার্লস স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী থাকাকালে ভাষাশহিদদের স্মরণে স্কুলে কালো পতাকা উত্তোলন করেন। এ কারণে সেখানকার জেলা প্রশাসকের আদেশে স্কুল থেকে তাকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এরপর সালেহা বেগমের পক্ষে আর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি।

ভাষা আন্দোলন শুরুর দিকে অন্দরমহলের নারীরাও আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে ভাষা আন্দোলনে সবচেয়ে বেদনার দিন ছিল ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ১৪৪ ধারা ভাঙার দায়ে পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন ছাত্রী গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে লায়লা নূর, প্রতিভা মুৎসুদ্দি, রওশন আরা বেনু, ফরিদা বারি, জহরত আরা, কামরুন নাহার লাইলি, হোসনে আরা, ফরিদা আনোয়ার ও তালেয়া রহমান অন্যতম।

ভাষা আন্দোলনে তমদ্দুন মজলিসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আনোয়ারা খাতুন। তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং ভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন।

প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য গাইবান্ধার বেগম দৌলতুন্নেছাও ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এ ছাড়া নাদেরা বেগম, লিলি হক, হামিদা খাতুন, নুরজাহান মুরশিদ, আফসারী খানম, রানু মুখার্জী প্রমুখ নারীদের অবদান স্মরণ করার মতো।

চট্টগ্রামে বেশকিছু কলেজছাত্রী ও মহিলারাও সে সময় ভাষা আন্দোলনের যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম তোহফাতুন্নেছা আজিম, সৈয়দা হালিমা, সুলতানা বেগম, নুরুন্নাহার জহুর, আইনুন নাহার, আনোয়ারা মাহফুজ, তালেয়া রহমান ও প্রতিভা মুৎসুদ্দি।

সাতক্ষীরায় সক্রিয়ভাবে এ আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন গুলআরা বেগম ও সুলতানা চৌধুরী। টাঙ্গাইলে ভাষা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন নুরুন্নাহার বেলী, রওশন আরা শরীফ প্রমুখ। রংপুরে নারীরা রাষ্ট্রভাষার দাবির মিছিলে গুলবির্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ মিছিলে অংশ নেন নিলুফা আহমেদ, বেগম মালেকা আশরাফ, আফতাবুন্নেছা প্রমুখ।

ভাষা আন্দোলনে রাজশাহীতে যারা গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেনÑড. জাহানারা বেগম বানু, মনোয়ারা বেগম বানু, ডা. মহসিনা বেগম, ফিরোজা বেগম ফুনু, হাফিজা বেগম টুকু, হাসিনা বেগম ডলি, রওশন আরা, খুরশিদা বানু খুকু, আখতার বানু প্রমুখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০