নিজস্ব প্রতিবেদক: কার্যকর উন্নয়নের জন্য সঠিক, সময়োপযোগী ও বিশ্বাসযোগ্য উপাত্তের বিকল্প নেই। কেননা উপাত্ত যদি সঠিক না হয় তাহলে কোনো পরিকল্পনাই কার্যকর হবে না। পাশাপাশি তথ্যের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততাও বাড়াতে হবে। কেননা বিশ্বে আজ যাদের কাছে যত বেশি তথ্য-উপাত্ত থাকবে, তারা তত বেশি শক্তিশালী। তাই তথ্য সংগ্রহে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
জাতীয় পরিসংখ্যান বিদস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল দ্বিতীয়বারের মতো দিবসটি পালন করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবন অডিটরিয়ামে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান। অনষ্ঠানে জাতীয় পরিসংখ্যান দিবসের লোগোর নকশা ও প্রতিপাদ্য নির্ধারণে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. সাহনাজ আরেফিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিবিএসের শুমারি শাখার পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল কাদির মিয়া। বক্তব্য দেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও এসএসটিআইয়ের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো সঠিকভাবে তথ্য উপস্থাপন করে বলেই আমরা জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারি। তবে এটি আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। এখন থেকে জরিপ প্রতিবেদনগুলো বাংলায় প্রকাশ করতে হবে। কেন বাংলা প্রাধান্য পাবে না? যে ভাষার জন্য রক্ত দিতে হয়েছে, সেই ভাষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। অনেকেই মনে করেন ইংরেজি না জানলে কিছুই হবে না। চীন, জাপান, রাশিয়া এবং বিশ্বের অনেক বড় বড় শক্তিধর দেশের মানুষ ইংরেজিতে কথা বলেন না। তারা কি পিছিয়ে আছে? তারা পারলে আমরা কেন পারব না? মনে রাখবেন শূন্যতা থাকলেই অন্যরা ঢুকে পড়বে। আর একটি বিষয় মনে রাখতে হবে। তা হলো ইংরেজি ভাষায়ও ল্যাটিন ও ফ্রেঞ্চ ভাষা থেকে অনেক শব্দ এসেছে। তারা যদি ধার করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না। যেসব ভাষা জনগণ গ্রহণ করেছে সেগুলোকে ওইভাবেই রেখে দেয়া উচিত। এটা দোষের কিছু নয়। তথ্যের ফ্রেশনেস বড় শক্তি। এজন্য যত দ্রুত এবং মানসম্মত তথ্য দেয়া যায়, ততই ভালো। জনশুমারি করতে দেরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রথম ধাক্কা এসেছিল করোনার কারণে। আর দ্বিতীয়টি এসেছে প্রক্রিয়াগত কারণে। তবে এসব সমাধান করা হচ্ছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরিকল্পনা যেমন জাতীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে, তেমনি পরিকল্পনা তৈরির অন্যতম উপাদান হচ্ছে তথ্য। দেশকে ব্র্যান্ডিং করতেও তথ্যের গুরুত্ব রয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোকে চারটি বিষয় সবসময় মনে রাখতে হবে। এগুলো হলোÑসঠিক তথ্য নিশ্চিত করা, সময়মতো তথ্য দেয়া, সঠিক সমন্বয় এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। কখনও কখনও কোনো কোনো তথ্যে আমরা বিব্রত হলেও সঠিক তথ্যই আমাদের দরকার।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘গুণগত পরিসংখ্যান উন্নত জীবনের সোপান’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে দিবসটি পালন করা হয়। ২০২০ সালের ৮ জুন মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রতিবছর ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে পরিসংখ্যান দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে পরিসংখ্যান আইন পাস হয়। এ আইনের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন আসে। এ দিবসটির স্মরণেই ২৭ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালের ২৬ আগস্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন চারটি পরিসংখ্যান সংস্থাকে এক করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর অনেক বন্ধুর পথ পেরিয়ে আজ শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থা।