নিজস্ব প্রতিবেদক: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করার আহ্বান জানিয়েছেন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের শক্তি অসীম নয়। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করতে না পারে, তবে আমরা ‘মুরুব্বি হতে পারব না।’ আমরা সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে জাতিকে গুড গভর্ন্যান্স এবং ভালো সংসদ গড়ে তোলার চেষ্টা করব। এদিক থেকে আমাদের কোনো কার্পণ্য থাকবে না।’’
নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব নেয়ার পর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সিইসি হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনে সব দলকে মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ইসি এককভাবে করতে পারে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিজেদের মধ্যেও একটা সমঝোতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা কমে আসে। না হলে কিন্তু দূরত্ব বাড়তে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাউকে না কাউকে অহংকার ত্যাগ করে আলোচনা করতে হবে। নির্বাচন করতে গেলে আমাদের ভূমিকা কী হবে? আমরা কতটা সংযত থাকব? পারস্পরিক ঐক্যে সহযোগিতামূলক আচরণ করব?’
নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানাবেন বলে জানান সিইসি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে দায়িত্বটা রয়েছে সেটা যদি শেয়ার না করেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন এককভাবে যে কাজ করবে সেখানে সীমাবদ্ধতা দেখা দেবে। আমাদের দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে আবদার করা, বিনয় করা, অনুনয় করা। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আমরা সহযোগিতা করব।’
সিইসি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন অর্থবহ করার জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে করণীয় না করলে, তারা নিজেদের প্রশ্ন করবেন নাকি আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করবেন? তাহলে আমি সবিনয়ে বলব, আমাদের ক্ষমা করবেন। আপনাদের কিছু যদি ব্যর্থতা থাকে তবে সেটাও স্বীকার করুন। সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রিস্টোর করুন। একটা ভালো সংসদ উপহার দেয়ার চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না।’
বিএনপি নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যদি এমন ঘোষণা দিয়েও থাকে, আমরা কি তাদের চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাব না? কোনো কথাই শেষ কথা নয়।’
সিইসি বলেন, ‘যারা নির্বাচন করবেন তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব কমিশনের রয়েছে। কর্মপদ্ধতি কী হবে সেটি ঠিক করিনি। তবে জানতে কিছু জ্ঞান আহরণ করেছি। সাংবিধানিক শপথ অনুযায়ী, দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে সিইসি বলেন, ‘মাঠ ছেড়ে চলে এলে হবে না। মাঠে থাকবেন। কষ্ট হবে। জেলেনস্কি পালিয়ে যেতে পারতেন কিন্তু তিনি পালাননি। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে যাচ্ছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যর্থতা, সফলতা মূল্যায়নের প্রশ্ন আসবে। গণমাধ্যম থেকে আমরা জ্ঞান আহরণের চেষ্টা করি। এই মুহূর্তে আগের কমিশনের দোষ ত্রুটি নিয়ে বলতে চাচ্ছি না। কোনো শিক্ষণীয় থাকলে আমরা সেটি করব।’
বিএনপিকে আস্থায় আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয় না। সরকার কিন্তু নির্বাচন করে না। একটি সরকার তো থাকবেই।’
বিএনপির ভোটে না আসার ঘোষণার বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘বিএনপি যদি ঘোষণা দিয়েও থাকে, তাদের কি আহ্বান জানাতে পারব না যে আপনারা আসেন। একটু চা খান। কোনো কিছুই শেষ নয়। নো সে ইজ ফাইনাল সে ইন পলিটিক্স (রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই)।’
এ সময় নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর, আনিছুর রহমান ও ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন।