রাজর্ষী রায়: ভারত থেকে রাশিয়া যেতে ভাড়া লেগেছিল মাত্র ৩০৫ ইউরো। তুলনামূলক কম ভাড়ার কথা চিন্তা করেই ভারত হয়ে মস্কো গিয়েছিলাম গত বছরের মাঝামাঝিতে। অ্যারোফ্লটের একটি উড়োজাহাজ মস্কোর উদ্দেশে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায় রাত দেড়টায়।
সকাল ৮টায় মস্কোর শেরেমেতিয়েভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাই। বলা চলে, ঘুম ভেঙেই ইউরোপে। রাতটুকু ঘুমিয়ে কাটানোর ফলে একটুও ক্লান্তি ছিল না। কোনো ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই ইউরোপে চলে আসাতে বেশ ভালো লাগছিল তখন। ভাড়া বিবেচনায় সবচেয়ে সস্তা উড়োজাহাজ রাশিয়ার অ্যারোফ্লট। তবে সেবা ও মান বিবেচনায় বিশ্বের প্রথম সারির উড়োজাহাজ সেবার সমান। বাংলাদেশ থেকে তাদের কোনো ফ্লাইট পরিচালনা হয় না। এজন্য অনলাইনে টিকিট কেটে ভারত থেকে অ্যারোফ্লটে চেপে বসতে হবে।
শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রিজ কার্লটন হোটেলে চলে আসি। মস্কো বলতে আমরা হয়তো শুধু ঠাণ্ডা, ক্রেমলিন ও পুতিনকে বুঝে থাকি। তবে জানেন কী, বৈশ্বিক বাণিজ্যের হাব রাশিয়ার রাজধানী। এ কসমোপলিটন মহানগরীতে প্রায় এক কোটি মানুষ বাস করে। বিশ্বের অন্যতম নামকরা হোটেল, ভবন, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও রেস্তোরাঁ রয়েছে এখানে।
মস্কোর রেড স্কয়ারে আমাদের হোটেল রিটজ কার্লটন। ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে হোটেলটির পরতে পরতে। এখানেই ঠাঁই হয় সেদিন। হোটেলটি রাশিয়ার রাজকীয় আমলের কথা মনে করিয়ে দেয়। এখানে জারের মতো রাজকীয়ভাবে সময় কাটানো যায়। একটু সস্তায় থাকার জন্য লোটে হোটেল ও হোটেল বাল্টশুজ কেমপিনস্কিতে উঠতে পারেন। হোটেলে প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ি শহর দর্শনে।
প্রথমে বেড়াতে যাই ক্রেমলিনে। মস্কোর দুর্গ এটি। শহরটির সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রয়েছে এটি। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানও বটে ক্রেমলিন। এর মধ্যে তিনটি ক্যাথেড্রাল রয়েছে। এখানকার সেন্ট বাসিল ক্যাথিড্রাল দিয়ে রাশিয়াকে চেনা যায়। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সেন্ট বাসিল ক্যাথিড্রাল। স্থানটিকে মস্কোর ভ্যাটিকানও বলা হয়। এখানে রয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন। মস্কো নদীর তীরে অবস্থিত ক্রেমলিন।
এরপর চলে যাই রেড অক্টোবর চকোলেট ফ্যাক্টরিতে। এটিও মস্কো নদীর তীরে। এখানে রেড অক্টোবর গ্যালারি ও লুমিয়ের ব্রাদার্স সেন্টার ফর ফটোগ্রাফি জাদুঘরে কিছুক্ষণ কাটাই। কখন যে দুপুর হয়ে গিয়েছিল টের পাইনি। সঙ্গীরা মিলে দুপুরের খাবারের জন্য বেরিয়ে পড়ি। রিজ কার্লটন হোটেলের মিক্সোলজিস্টের স্বাদ তখনও মুখে লেগে ছিল। রুশ শৈলীসম্পন্ন অনেক রেস্তোরাঁ রয়েছে মস্কোয়। রাশিয়ার খাবারের দোকানগুলোয় সাধারণত বয়স্ক মানুষরা অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান। জনশ্রুতি রয়েছে, প্রবীণদের দিয়ে অভ্যর্থনা জানানোর ফলে আগত অতিথিরা স্বস্তি বোধ করেন। রেড স্কয়ারের কাছাকাছি রয়েছে গদুনভ রেস্তোরাঁ। এখানে গিয়ে স্যামন ও সবজি দিয়ে দুপুরের খাবার সারি। রাশিয়ার স্যুপ, সালাদ, ভাত, সেদ্ধ চিংড়ি ও মুরগির স্বাদ এখনও মুখে লেগে রয়েছে। প্রায় সব খাবারই মসলাবিহীন। ফ্রেঞ্চ ও রাশিয়ান খাবারের মিশেলের জন্য ঢু মারতে পারেন ক্যাফে পুশকিনে। গেনাজভেল, মারি ভান্না, মিউ মিউ প্রভৃতি হোটেলের নাম দেশে থাকতেই জেনে গিয়েছিলাম। এসব রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম তুলনামূলক চড়া। এজন্য স্ট্রিটফুড বেছে নিতে পারেন। রেড স্কয়ারসহ মস্কোর কামচাটকা, সভেতনয় সেন্ট্রাল মার্কেটের স্ট্রিট ফুডের মান বেশ ভালো, যাকে বলে নির্ভেজাল। এখানকার খাবারের মধ্যে ক্রোশকা কারতোসকা, হাছাপুরি, শর্মা, ডোনাট ও সামুদ্রিক মাছ তুলনামূলক সস্তায় পাওয়া যায়।
খাওয়া-দাওয়া শেষে রেস্টুরেন্টের বাইরে চলে আসি। সূর্যের তাপ নেই। কেমন যেন মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ। তবে বৃষ্টি হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। জানতে পারি, প্রায় সারাবছরই এমন থাকে এখানকার আবহাওয়া। একই সঙ্গে কমবেশি শীত লেগে থাকে। শুরু হয় তুষারপাত। মস্কোয় কয়েক দিন সময় কাটানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপে যাওয়ার সময়সূচি তাড়া করছিল। তাই মধ্যরাতে আবার শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরের দিকে রওনা করি। মাত্র ১৬ ঘণ্টার জন্য মস্কোতে থাকলেও শহরটির আতিথেয়তা কখনও ভোলার নয়।
]
Add Comment