এবার পূবালী ব্যাংকে খেলাপি হলো ৩৭১ কোটি টাকা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সাদ মুসা গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান খেলাপি হয়েছে একাধিক ব্যাংকে। এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এমএ রহমান ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবার খেলাপি হয়েছে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডে। ব্যাংকটির সিডিএ এভিনিউ শাখায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৭১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

সূত্রমতে, চট্টগ্রামের পোশাক খাতের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মহসিন। তিনি রপ্তানির জন্য একাধিকবার সিআইপি খেতাবপ্রাপ্ত হন। পোশাক খাতের একাধিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে তিনি গড়ে তোলেন সাদ মুসা গ্রুপ। এসব কোম্পানিগুলো আয় দিয়ে বাড়িয়েছেন অন্যান্য ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি হয়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। তবে মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ, অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত, ফান্ড ব্যবস্থাপনার অভাব, করপোরেট সংস্কৃতিচর্চার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ডুবেছে সাদ মুসা গ্রুপের ব্যবসা।

এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমএ রহমান ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পূবালী ব্যাংক লিমিটেড সিডিএ এভিনিউ শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয়। প্রথম দিকে নিয়মিত ঋণ থাকলেও পরে তা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি পাওনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭১ কোটি ৭৮ লাখ ২৫ লাখ ১৯৬ টাকা। আর এ পাওনা পরিশোধে গত এক বছরে কয়েকবার তাগাদা দিলেও প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা একাধিকবার ব্যর্থ হন। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ খেলাপি পাওনা আদায়ে ঋণের বিপরীতে বায়েজিদ থানার কুলগাঁও মৌজায় ৭৮ ডেসিমেল বন্ধকিতে থাকা জমি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এ নিলাম কার্যক্রম আগামী ৩১ মার্চ ব্যাংকটির সিডিএ এভিনিউ শাখায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে আগ্রহী ক্রেতারা উপস্থিত থাকতে পারবেন।

সাদ মুসা গ্রুপ ও ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৮২ সালে পোশাক খাত দিয়ে ব্যবসা শুরু করে সাদ মুসা গ্রুপ। চট্টগ্রামের পোশাক খাতের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মহসিন চট্টগ্রাম ফেব্রিকস বোর্ড লিমিটেড, সাদ মুসা ফেব্রিকস লিমিটেড, এমএ রহমান ডায়িং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, সাদ মুসা হোম টেক্সটাইল অ্যান্ড ক্লথিং লিমিটেড, দেশ কম্পিউটার, মার্স অটোমোবাইলস, সাদ মুসা হাউজিং কমপ্লেক্স লিমিটেড, হাসনি বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, আল মুস্তফা ইন্ডস্ট্রিজ লিমিটেড, আহমদি অয়েল মিলস লিমিটেড, ক্রিসেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রোকেয়া স্পিনিং মিলস লিমিটেড, এমদাদ এতিমিয়া স্পিনিং মিলস লিমিটেড, সুলতান হাবিবা ফেব্রিকস লিমিটেড, মাহমুদ সাজিদ কটন মিলস লিমিটেড, সায়মা সামিরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, কর্ণফুলী জুট ট্রেডিং নামে একের পর এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ফ্যাব্রিকস, স্পিনিং, উইভিং, ডায়িং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং কারখানা চালুর ধারাবাহিতকায় আনোয়ারায় নির্মাণ করেন রপ্তানিমুখী শিল্প পার্ক। তবে শুরু থেকে নানা জটিলতার কারণে সংকটে পড়ে গ্রুপটি এখন পর্যন্ত পার্কটি চালু করতে পারেনি, পুরো গ্রুপ ব্যবসায় যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়া বৃহৎ এ গ্রুপের ব্যবসায় পরিচালনার জন্য দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকার মতো ঋণ সুবিধা নেন। এর মধ্যে গ্রুপটির কাছে ন্যাশনাল ব্যাংকের পাওনা ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৩৮১ কোটি, এক্সিম ব্যাংকের ৩৫০ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৩০০ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্টের ২৪৬ কোটি, সাইথইস্ট ব্যাংকের ১১০ কোটি, উত্তরা ব্যাংকের ৭৮ কোটি ও উত্তরা ফিন্যান্সের ৮০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশনেরও বড় অঙ্কের পাওনা বকেয়া আছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ব্যাংক পাওনা আদায় নিয়ে চিন্তিত। শুধু তা-ই নয়, এ ব্যবসায়ীকে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের পরিচালক পদও ছাড়তে হয়েছে।

এছাড়া কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচার, কর ফাঁকি ও আয়কর রিটার্নে বিদেশে বিনিয়োগের তথ্য গোপনের অভিযোগও ছিল।

এ প্রসঙ্গে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম খান চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর ক্ষুদেবার্তা দেয়া হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে ব্যাংকটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, সাদ মুসা গ্রুপের এমএ রহমান ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজের ৩৭১ কোটি টাকা ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এ খেলাপি ঋণ আদায়ে আমরা অনেক চেষ্টা করি। তিনিও একাধিকবার পাওনা পরিশোধে কথা দিলেও শেষ পর্যন্ত কথা রক্ষা করতে পারেননি। ফলে খেলাপি ঋণ আদায়ে আমরা ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি। বিভিন্ন মাধ্যমে পাওনা আদায়ের উদ্যোগও নেয়া হয়। যদিও এ পাওনা আদায়ে একাধিকবার তার সঙ্গে দেনদরবার করা হয়, তবু আমরা ব্যর্থ। এরপর আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় পাওনা আদায়ের চেষ্টা করব। তিনি আরও বলেন, মহসিন সাহেবের অদূরদর্শী বিনিয়োগের কারণে গ্রুপের অবস্থা খারাপ হয়েছে। এ গ্রুপের অবস্থা ২০১৬ সাল থেকে খারাপ হতে থাকে, যা ২০১৮ সালের দিকে প্রকাশিত হয়। এখন তো তার মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তবে তিনি সবসময় আশা প্রকাশ করেন, ব্যবসা আবার ভালো হবে। কিন্তু এসব আলাপের কোনো ভিত্তি পাচ্ছি না। এর মধ্যে তিনি বন্ধ জুট মিল পরিচালনার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। এগুলোর কোনো মানে বুঝলাম না।

গতকাল বিকালে ঋণখেলাপির বিষয়ে সাদ মুসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহসিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য পাওয়া যাযনি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, করোনার কারণে আমরা এখন অনেক চাপে আছি। এর মধ্যে নানা জটিলতার মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করছি। চেষ্টা করছি ব্যাংকগুলোর ঋণ পরিশোধে। এখন শ্রমিকের বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অথচ ৩৭ বছরের ব্যবসায় আমাদের কোনো দুর্নাম ছিল না। আপনি দেখবেন, আমাদের মতো বেশি কর্মসংস্থান করছে এমন গ্রুপ নেই। গত কয়েক বছরে তিনশ’র মতো কারখানা বন্ধ হয়েছে। আমরা অনেক কষ্ট করে প্রতিষ্ঠান চালু রেখেছি। চেষ্টা করছি ভালো করার জন্য। দেখা যাক কী হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০