নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শোভন কর্মসংস্থানের ওপর নজর দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এ দাবি উঠে এসেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে ‘জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা’ শীর্ষক আঞ্চলিক সংলাপে। ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনের (ইপসা) চট্টগ্রাম কার্যালয় এবং জাতিসংঘ ডেমোক্রেসি ফান্ডের (ইউএনডিইএফ) সহযোগিতায় গতকাল চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি হোটেলে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।
সংলাপে বক্তারা বলেন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, অবকাঠামো প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুণগত মানের জন্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে নজর বাড়াতে হবে। গুণগত শিক্ষা ব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীবান্ধব কর্মসংস্থান, পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলা, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণের অভাব প্রভৃতি বিষয় নিয়ে সংলাপে আলোচনা হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, গত পাঁচ দশকে অর্থনীতি, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসসহ বিভিন্ন সূচকে উন্নতি হয়েছে। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার তৈরিতে অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু ইশতেহার কতটুকু বাস্তবায়িত হলো, জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা কতটুকু এবং জনগণের ইশতেহার তৈরিতে দায়িত্ব প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের নজর দেয়া আবশ্যক।
চট্টগ্রাম ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান সংলাপে সূচনা বক্তব্যে বলেন, উন্নতির সুফল সব শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সিপিডির সংলাপ ও যোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বিভিন্ন সূচকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের অবস্থা তুলে ধরেন। এছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান ও জেন্ডার সমতা বিষয়ে বিভিন্ন অঙ্গীকার ও অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এ সংলাপের আগে বাংলাদেশের ৯০টি স্থানে মুক্ত আলোচনা করা হয়, যেখানে প্রায় ৯১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থাপনায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের ইশতেহার সম্পর্কে মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত বলেন, ইশতেহারে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয় না। আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি ড. আনোয়ারা আলম বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং পরীক্ষামুখী শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে না, যার ফলে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়ছে।
সংলাপে ঘাসফুলের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য ড. মনজুর উল আমিন চৌধুরী বলেন, বৈষম্যের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজকে দেখা উচিত। উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সংলাপে আরও অংশ নেন ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান। তিনি বলেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুণগত মানের দিকটিকে অবশ্যই দেখতে হবে, তা না হলে গুটিকয়েক মানুষের জন্য উন্নয়নের সুবিধা আটকে থাকবে।
সংলাপে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকারের সঙ্গে জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে এবং অনেক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এবং তা এগিয়ে যাচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ও সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, জনগণকেও এসব ব্যাপারে আরও সচেতন করে তুলতে হবে এবং তিনি গঠনমূলক সমালোচনার ওপরে জোর দেন।