ব্যাংকে সুদের সীমা তুলে দিতে সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বর্তমানে ব্যাংকঋণে সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। সুদহারের এ সীমা তুলে দেয়ার সুপারিশের পক্ষে যুক্তি হিসেবে আইএমএফ বলেছে, উম্মুক্ত বাজার ব্যবস্থায় ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যবসার খরচ কমিয়ে আনা ও জনগণকে সুফল দিতেই সুদহার নির্দিষ্ট করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সুদহার-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী বলে মনে করি। আইএমএফের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে সংস্থাটির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছর সংস্থাটির একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের পরিস্থিতি জানতে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে। সম্প্রতি তারা বাংলাদেশে এসেছিলেন। সদস্য দলের পর্যবেক্ষণ দিয়ে তৈরি করা সুপারিশ তাদের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেই সুপারিশের আলোকেই বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বাংলাদেশ বিষয়ে সংস্থাটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ওই প্রতিবেদনে আইএমএফ বলেছে, কভিড-১৯ প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের তাৎক্ষণিক উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। এতে অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হবে। তবে সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য প্রযোজ্য নীতিমালাগুলোর সহায়তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। ঋণের মান নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামোয় সংস্কার আনার সুপারিশও করেছে তারা। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আমাদের নেয়া ব্যবস্থাকে কার্যকর আখ্যা দিলেও সুদহার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এটি অনেকটা স্ববিরোধী অবস্থান বলেই প্রতীয়মান। আমরা অবশ্যই সহযোগী সংস্থার পরামর্শ ও অভিমতকে গুরুত্ব দেব। কিন্তু আমাদের দেশ, জনগণ ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার বিষয়টিও দেখতে হবে।
অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন, সুদ কমানো ভালো উদ্যোগ হিসেবে ব্যবসায়ীদের প্রশংসা পেয়েছে। তবে তারা বলেছেন, ঋণ যেন কমে না যায়। এখন যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতেই হয়, অংশীজনদের সঙ্গে মত বিনিময় করে ভেবেচিন্তে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সুদহার কমানোয় ঋণের চাহিদা বাড়বে। এতে বেসরকারি খাত চাঙা হয়ে উঠবে। ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশ, আমানতের সুদহার ছয় শতাংশ টেকসই হলে অন্যদের তো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সুদহার বেঁধে না দিয়ে খেলাপি ঋণ কমানোকে অনেকে ভালো সমাধান বলেছেন। কিন্তু আমাদের দিয়ে নানা কায়দায় খেলাপি ঋণ থাকছে এবং তা ক্রমেই বাড়ছে। অবশ্যই আদায়যোগ্য মন্দ ঋণ আদায় করতে হবে।
ব্যাংকের সুদের হার কমানো নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। শিল্পে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকনির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে বিকল্প অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। এর একটা উৎস হতে পারে পুঁজিবাজার। এ বাজার দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রাখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা আরও শক্ত হওয়া উচিত। তাহলেই কেবল ঋণের জন্য ব্যাংকনির্ভরতা কমতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে সুদহার বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।