আধুনিক যুগে পণ্য বাণিজ্যের প্রসারে ব্র্যান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো মূল্যবান সামগ্রীর ওপর স্বত্ব বা অধিকার প্রতিষ্ঠার চিন্তা থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে প্রথম ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়টি উদ্ভূত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তখন ব্র্যান্ডিংয়ের মূল বিষয় ছিলÑ‘এটি আমার, কেউ নিও না’। আঠারো শতকে ব্র্যান্ডিংয়ের ধারণা পরিবর্তিত হয়। এর নতুন রূপ হয় ‘এটি আমার, তুমি কেনো’। তবে স্থান-ব্র্যান্ডিংয়ের ধারণা আসে মহামতি আলেকজান্ডারের আমলে। একটি নগরকে বিশ্ববাসীর কাছে অনন্যরূপে উপস্থাপনের জন্য গত শতকের সত্তরের দশকে নগর-ব্র্যান্ডিং শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকে স্থান বা গন্তব্য ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয় সামনে আসে, যখন অস্ট্রেলিয়া, হংকং ও স্পেন এ ধরনের কৌশল প্রণয়ন করে। মূলত দেশ বা নেশনÑব্র্যান্ডিংয়ের বিষয় ওই সময় থেকেই প্রচলন। তবে পণ্য ব্র্যান্ডিং আমাদের কছে নতুন মনে হলেও, প্রকৃতপক্ষে আমাদের রয়েছে ব্র্যান্ডিংয়ের গৌরবোজ্জ্বল অতীত। এ অঞ্চলের সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ পণ্য হলো ঢাকাই মসলিন। এর প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে। চতুর্দশ শতাব্দীতে মরক্কোর বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলাদেশ পরিভ্রমণ-সংক্রান্ত বর্ণনায় সোনারগাঁয়ের মসলিনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ বিশ্বে অনন্য ব্র্যান্ড হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। পোশাক ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী আমাদের পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা অপরিসীম। অতি সম্প্রতি কতকগুলো পণ্য আমাদের ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
তীব্র প্রতিযোগিতার এ সময়ে বিশ্বব্যাপী দেশগুলো নানাভাবে ব্র্যান্ডিং করে আসছে। কোনো পণ্য, সেবা, উদ্যোগ, সংস্থা কিংবা কোনো স্থানের পরিচয়কে হƒদয়গ্রাহী করে ভোক্তাদের আকৃষ্ট করার সর্বোত্তম কৌশল হলো ব্র্যান্ডিং। কোনো সন্দেহ নেই, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় তারা টিকে থাকবে; যারা ব্র্যান্ডিংকে গুরুত্ব দেবে। বাংলাদেশও ব্র্যান্ডিংকে গুরুত্ব দেয়। দেশে বিভিন্ন মেলা, প্রদর্শনীর আয়োজন করে, বিদেশের মেলায়ও অংশ নেয়। কিন্তু গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘দুবাই এক্সপো-২০২০: বাংলাদেশের নেতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ে লজ্জায় প্রবাসীরা’ শীর্ষক প্রতিবেদন আমাদের হতাশ করে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে ফিরে আমাদের প্রতিবেদক প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। তিনি জানান, ওই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ১৯২ দেশের মধ্যে আমাদের প্যাভিলিয়নই সবচেয়ে দীন। দেশের নেতিবাচক এমন ব্র্যান্ডিংয়ে লজ্জায় পড়েছেন প্রবাসীরা।
আমাদের পোশাকশিল্প বড় হলেও, আমাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং নেই। এ জন্য পোশাকের মূল্য নির্ধারণে রপ্তানিকারকের ভূমিকা থাকে না। বায়িং হাউসগুলো পোশাকের যে মূল্য নির্ধারণ করে, সেটাই মেনে নিতে হয়। যখন নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরিতে উদ্যোগ নিতে হবে, দুবাই এক্সপোতে আমাদের সীমাবদ্ধতা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বহুমুখী উদ্যোগের মাধ্যমে রপ্তানিকে সম্প্রসারণ করতে হবে। বিশেষ কোনো খাতে নির্ভরতা কমাতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে পণ্য সংখ্যা বাড়াতে হবে, খুঁজতে হবে নতুন বাজার। তাই বিদেশের বিভিন্ন মেলায় আমাদের অংশগ্রহণকে ভালোভাবে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। বিদেশি ক্রেতারা সাধারণত এসব মেলার ভিত্তিতে কোনো দেশে বিনিয়োগ ও ক্রয়াদেশের সিদ্ধান্ত নেয়। তাই ব্র্যান্ডিং বাড়াতে সম্ভাব্য সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।