মধ্যপ্রাচ্যের টিকিট বিক্রিতে স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হোক

বিশ্বব্যাপী কভিড মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আবারও বাংলাদেশের উড়োজাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এতে আশার আলো দেখতে পেয়েছেন বিদেশগামী শ্রমিকরা। কিন্তু ভাড়ার নৈরাজ্যে তাদের ভোগান্তিও শুরু হয়। প্রায় প্রতিদিনই নানা অজুহাতে দাম বাড়ছে টিকিটের। সিট নেই, চাহিদা বেশি এসব অজুহাত দেখিয়ে যাত্রীদের পকেট কাটা হচ্ছে। গতকাল শেয়ার বিজে ‘ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট: ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায় দাম বেশি মধ্যপ্রাচ্যের টিকিটের’ শীর্ষক প্রতিবেদন আমাদের বিদেশগামী শ্রমিকদের ভোগান্তি, ব্যবসায়ীদের বেপরোয়া মনোভাব সামনে এসেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, প্রবাসীদের চাপ আগের তুলনায় কমলেও মধ্যপ্রাচ্যের রুটগুলোর বিমান ভাড়া কমেনি। অগ্রিম টিকিটের তারিখ পরিবর্তন যাত্রীদের করতেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। টিকিট সংকট কমলেও ভাড়া কমছে না। সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কারণেই যাত্রীদের চড়া দামে টিকিট সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই টিকিটের এত দাম দিতে হচ্ছে না। একজন প্রবাসী আমাদের প্রতিবেদকের কাছে উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, সরকার সাধারণত যাত্রীদের সঙ্গে অন্যায় করছে। না হলে এত দিনেও টিকিটের মূল্য কমাতে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মাঝে কিছু উদ্যোগ নিলেও সরকার টিকিটের মূল্য কমাতে পারেনি, বরং ব্যর্থ হয়েছে।  একজন প্রবাসী শ্রমিক স্বদেশে এসেছেন পাঁচ মাস আগে। টিকিটের মূল্য বেশি হওয়ায় ফোন করে ছুটি বাড়িয়েছে। ভেবেছিলেন ফেব্রুয়ারি শেষে টিকিটের দাম কমবে। কিন্তু কমেনি। টিকিটের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সরাসরি সরকারের লোক জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন কেউ।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) থেকে বলা হচ্ছে, ‘যদিও কমার্শিয়াল ইস্যুতে তাদের হস্তক্ষেপ করার তেমন সুযোগ নেই।’ তাদের না হয় কিছু করার অবকাশ নেই। তাই বলে অরাজকতা তো চলতে পারে না। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের রক্ষায় দুর্ভোগ লাঘবে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের ভাড়া বৃদ্ধি সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ও অবহিত। তারা দফায় দফায় মিটিং-সিটিং করছে। ভাড়ায় নৈরাজ্যকারীদের শনাক্ত করতে গোয়েন্দা সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছে। কিছুটা তথ্য পাওয়ার কথা শোনা গেছে। তবে উড়োজাহাজ ভাড়ায় নৈরাজ্য বন্ধ হয়নি। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ভাড়া কমানোর দায়িত্ব সরকারের নয়। এটি এ খাতের ব্যবসায়ীরাই ঠিক করবেন।’ এটি ব্যবসায়ীদের ওপর ছেড়ে দেয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। প্রবাসীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠান, তার একটি বড় অংশ লুটে নিয়ে যাবে এয়ারলাইনসগুলো, এটি দুঃখজনক। টিকিটের দাম বৃদ্ধি ও বুকিং পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি করলে উড়োজাহাজ ভাড়া কমকে এবং সুফল পাবেন মধ্যপ্রাচ্যগামী শ্রমিকরা। প্রবাশী কর্মীরাদের সুরক্ষায় মধ্যপ্রাচ্যের টিকিট বিক্রিতে স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। উড়োজাহাজভাড়া সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কঠোর হতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০