প্রতিনিধি, রাজশাহী: সরকার আন্তরিক না হলে ইশতেহারে উল্লেখিত অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। রাজশাহী অঞ্চলের যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও সেখানে জনসম্পৃক্ততার অভাব রয়েছে। গতকাল শনিবার রাজশাহীর এক হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক আঞ্চলিক সংলাপে এসব বলা হয়।
সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, রাজশাহী এবং জাতিসংঘ ডেমোক্রেসি ফান্ডের (ইউএনডিইএফ) সহযোগিতায় ‘জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা’ শীর্ষক আঞ্চলিক সংলাপের আয়োজন করে সিপিডি।
নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারের মাধ্যমে তাদের উন্নয়নের অঙ্গীকার করে। ইশতেহারে বর্ণিত অঙ্গীকারগুলো যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এটিকে দল ও ভোটারদের মাঝে একটি লিখিত চুক্তি বলে ধরে নেওয়া যায়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে। সংলাপে নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, জবাবদিহিমূলক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য আমাদের সবার কথা শোনার সংস্কৃতি ধরে রাখতে হবে এবং একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।
সূচনা বক্তব্য দেন সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি নির্বাচনী ইশতেহারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়বদ্ধ করতে হবে এবং নাগরিকদের আরও সোচ্চার হয়ে উঠতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য। উপস্থাপনায় তিনি বিভিন্ন সূচকে রাজশাহী অঞ্চলের অবস্থা তুলে ধরেন। এছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা বিষয়ে বিভিন্ন অঙ্গীকার ও অগ্রগতি সম্পকের্ আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, এ সংলাপের আগে বাংলাদেশের ৯০টি স্থানে মুক্ত আলোচনা করা হয়, যেখানে প্রায় ৯১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থাপনায় রাজশাহী অঞ্চলের মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের ইশতেহার সম্পর্কে মতামত এবং পরামর্শও তুলে ধরা হয়।
আওয়ামী লীগ রাজশাহী জেলা কমিটির নির্বাহী সদস্য সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের পর্যটন ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে এবং চলনবিলকে রক্ষা করতে হবে। তিনি শিক্ষিত যুবকদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরির ওপরে জোর দেন। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এ বিষয়ে এখনই সতর্ক হতে হবে।
সংলাপে অংশ নেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সাবেক সংসদ সদস্য জাহান পান্না, সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াদুদ।
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) রাজশাহী ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী সামিয়া বেগম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রাকিব আহমেদ, মহানগর সুজনের সভাপতি মো. পিয়ার বক্স প্রমুখ।
বিএনপির জাহান পান্না বলেন, নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট পিছিয়ে আছি এবং নারীদেরকে আরও সোচ্চার হতে হবে।
মহানগর সুজনের সভাপতি মো. পিয়ার বক্স বলেন, সরকার আন্তরিক না হলে ইশতেহারের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। রাজশাহী অঞ্চলের যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও সেখানে জনসম্পৃক্ততার অভাব রয়েছে।
ড. রকীব আহমেদ, বলেন বেসরকারি পর্যায়ে চাকরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা চাকরি পাচ্ছে না। রাজশাহীতে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে।
সামিনা বেগম বলেন, ইশতেহার প্রণয়নের আগে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন এবং নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই স্থানীয় চাহিদার তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরকার তাদের ইশতেহার কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারল তা প্রকাশ করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, নারীরা নিজেদের গৃহেই নির্যাতনের শিকার হয়, সুতরাং নারীদের অধিকার বাস্তবায়ন করতে হলে এ নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। তিনি ‘তথ্য অধিকার আইন’ ব্যবহারের ওপরে গুরুত্ব দেন।