যুদ্ধের কারণে খাদ্যের দাম ২০ শতাংশ বাড়তে পারে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম আট থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এতে বিশ্বব্যাপী অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। খবর: রয়টার্স।

এফএও’র বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে নানা ধরনের ফসল চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দেশটিতে চাষের মৌসুম শুরু হয় মে মাসে, যা এবার ব্যাহত হতে পারে। এদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার খাদ্য রপ্তানি নিযে সংশয় দেখা দিয়েছে। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন এবারের মৌসুমে ফসল তুলতে পারবে কি না, তা নিয়ে যেমন সংশয় রয়েছে, তেমনি নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার খাদ্য রপ্তানিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এফএও জানায়, রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম গম রপ্তানিকারক দেশ। এক্ষেত্রে ইউক্রেনের অবস্থান পঞ্চম (বিশ্বের ১০ শতাংশ গমের জোগানদাতা)। দেশ দুটি বিশ্বে ১৯ শতাংশ যব সরবরাহ করে। এছাড়া গমের ১৪ ও ভুট্টার চার শতাংশ জোগান দেয় এই দুই দেশ। বিশ্বের অন্তত ৫০টি দেশ গমের জন্য ৩০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি রাশিয়া-ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল। এসব দেশের বেশিরভাগ স্বল্পোন্নত দেশ।

সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্য রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশের বেশি আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। ইউক্রেন ও রাশিয়া বৈশ্বিক চাহিদার ৮০ শতাংশ সূর্যমুখী তেল সরবরাহ করে থাকে। রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম সার সরবরাহকারী।

এএফও’র মতে, ইউক্রেনে হয়তো ২০২২-২৩ মৌসুমে শীতকালীন শস্য, ভুট্টা ও সূর্যমুখীর মতো ফসল চাষে ব্যবহƒত জমির ২০ থেকে ৩০ শতাংশ অনাবাদি থেকে যাবে। সংস্থাটির মহাপরিচালক কিউ ইউ ডং বলেন, এসব পণ্যের প্রধান দুই রপ্তানিকারকের কৃষিকাজে ব্যাঘাত বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

কৃষি বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেনের অনুপস্থিতিতে তৈরি ঘাটতির সামান্য অংশই অন্য দেশগুলো পূরণ করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। সংস্থাটির মতে, এই সংকট বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও পশুখাদ্যের দাম আট থেকে ২২ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে।

এফএও জানায়, যুদ্ধের প্রভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্বব্যাপী অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা ৮০ লাখ থেকে এক কোটি ৩০ লাখ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

গত ফেব্রুয়ারিতে এফএও’র খাদ্যমূল্য সূচক নতুন রেকর্ড করেছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এ সময় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে ২৪ দশমিক এক শতাংশ। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর আগে থেকেই এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভোজ্যতেল ও দুগ্ধজাত পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিকে এর প্রধান কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে এফএও’র এক প্রতিবেদনে। ইউক্রেনে যুদ্ধের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে পণ্যের দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে এ যুদ্ধ। যুদ্ধের প্রভাবে আগামী মাসগুলোয় এটি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দাম বাড়তে পারে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোয়। এরপর সাব-সাহারান আফ্রিকাসহ পূর্ব ও উত্তর আফ্রিকায় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।

এ অবস্থায় অন্য দেশগুলোকে নিজেদের উৎপাদিত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা না দিতে অনুরোধ করেছে জাতিসংঘ। ইউক্রেনে হামলার কারণে এরই মধ্যে গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ। বিশ্বব্যাপী বেশ কয়েকটি দেশ খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। কয়েকটি দেশ তাদের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ রক্ষার জন্য নিষেধাজ্ঞার কথা

বিবেচনা করছে।

বিশ্বে প্রতি দশজনে একজন পর্যাপ্ত খাবার পায় না। এছাড়া কভিড-১৯ মহামারির কারণে দারিদ্র্য বেড়েছে। তাই শিগগির যুদ্ধ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য সংকটে পড়বে বিশ্ব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০