সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর। এ বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে খালাসের পর থেকে চার দিন পর্যন্ত বিনা খরচে রাখার সুযোগ আছে। এর পর থেকে ২০ দিন পর্যন্ত কনটেইনার আকারভেদে ২৪ কিংবা ৪৮ ডলারে রাখার সুযোগ থাকলেও কোনো কোনো আমদানিকারক আরও বেশি সময় ধরে কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে ফেলে রাখে। এতে বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ জটিলতা কাটাতে ২১তম দিন থেকে স্বাভাবিক ভাড়ার চারগুণ ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা আগামীকাল থেকে বাস্তবায়িত হবে।
জানা যায়, চলতি মাসের শুরুতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন বিভাগ। দীর্ঘদিন বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে খালাস না নিয়ে রেখে দেয়া এফসিএল কনটেইনারগুলোর ক্ষেত্রে এ বর্ধিত চারগুণ স্টোর রেন্ট আদায় করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ, যা আগামী ১৫ মার্চ থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দিয়েছে বন্দরের পরিবহন বিভাগ।
চট্টগ্রাম বন্দরের ট্যারিফ রেট অনুসারে, ২১ ফুটের বেশি একটি পণ্যবোঝাই কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানোর প্রথম চার দিন বিনা খরচে রাখার সুযোগ আছে। এরপরে প্রথম সাত দিন ভাড়া ১২ ডলার। এরপর অষ্টম দিন থেকে ২০তম দিন পর্যন্ত ২৪ ডলার। এর পর থেকে প্রতিদিনের ভাড়া ৪৮ ডলার, যা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে চারগুণ অর্থাৎ ১৯২ ডলার ভাড়া আদায়ে সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর ৪১ ফুটের বেশি কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানোর প্রথম চার দিন বিনা খরচে রাখার সুযোগ আছে। এরপর প্রথম সাত দিন ভাড়া ১৮ ডলার। এরপর অষ্টম দিন থেকে ২০তম দিন পর্যন্ত ৩৬ ডলার। এর পর থেকে প্রতিদিনের ভাড়া ৭২ ডলার, যা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে চারগুণ অর্থাৎ ২৮৮ ডলার ভাড়া আদায়ে সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, আমদানিকৃত পণ্য সমুদ্র পণ্যে পরিবহনের জন্য কনটেইনারে পরিবাহিত হয়। এতে সবার জন্য সুবিধা হয়। এ কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানোর প্রথম চার দিন রাখা যায় বিনা মূল্যে। এরপর আরও ২০ দিন কম ভাড়ায় রাখা যায়। কিন্তু এ সুবিধার অপব্যবহার করে অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। কারণ কনটেইনার পরিবহন ব্যয়ের তুলনায় ভাড়া খুবই কম। এতে অনেক সময় বন্দরের কনটেইনার জটও সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ঈদের ছুটি ও টানা বর্ষা মৌসুমে।
তারা আরও বলেন, বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। এখানে সেবা ও সুবিধার অপব্যবহার করা যাবে না। কারণ আমাদের আমদানির তুলনায় বন্দর সুবিধা তেমন বাড়েনি, যদিও সক্ষমতা বাড়াতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলমান আছে। এগুলো শেষ হলে তখন সক্ষমতা আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল হক বলেন, সম্প্রতি অনেক আমদানিকারক এফসিএল কনটেইনার-ভর্তি পণ্য এনে বন্দরের অভ্যন্তর থেকে খালাস না নিয়ে দিনের পর দিন বন্দরে স্টোর করে রাখে। এতে বন্দরের ভেতরে পড়ে থাকা কনটেইনারের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। এ কারণে বন্দরের সব ব্যবহারকারী ও আমদানিকারককে দ্রুত কনটেইনার খালাস নিতে অনুরোধ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অন্যথায় রেগুলেশন ফর ওয়ার্কিং অব চিটাগং পোর্ট (কার্গো অ্যান্ড কনটেইনার), ২০০১-এর ১৬০ ধারার আলোকে কমন ল্যান্ডিং ডেটের ২১তম দিন থেকে চারগুণ বর্ধিত স্টোর রেন্ট কার্যকর করা হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে প্রায় ৪৯ হাজার কনটেইনার রাখার সক্ষমতা আছে। এর বিপরীতে গতকাল বেলা ১টা পর্যন্ত ৩৬ হাজার ২৪১টি কনটেইনার ছিল। এ সময়ে অকশন ইয়ার্ডে ছয় হাজার ৯৮৫টিইইউএস কনটেইনার পড়ে ছিল। আর ২৪ ঘণ্টায় জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানো হয়েছে তিন হাজার ২৪ টিইইউএস এবং জাহাজে ওঠানো হয়েছে তিন হাজার টিইইউএস।