ঊর্ধ্বমুখী মিউচুয়াল ফান্ড উল্টো দৌড় বিমা খাতের

মো. আসাদুজ্জামান নূর: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল মূল্য সূচকের নামমাত্র উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে টাকার অঙ্কে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। দিন শেষে লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে বেশিরভাগের দর কমেছে। দিনটিতে মিউচুয়াল ফান্ড ও বিমা খাতের উল্টো দৌড় দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা।

গত অর্থবছরে দারুণ লভ্যাংশ দেয়ার পরও ব্যাপক দরপতনের শিকার মিউচুয়াল ফান্ড খাতে হঠাৎ চাঙ্গাভাব দেখা দেয় পুঁজিবাজারে। সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে এক দিনে দাম বেড়েছে ৩৪টির। বাকি দুটির মধ্যে একটির ইউনিট মূল্য কমেছে ২০ পয়সা, বাকিটির অপরিবর্তিত থাকে। সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধির তালিকার ১০টির মধ্যে তিনটিই মিউচুয়াল ফান্ড আর ২০টির মধ্যে সাতটি। এই সাতটির দর বেড়েছে সর্বনি¤œ ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

সব মিলিয়ে দুটি ফান্ডের দর বেড়েছে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি, একটির প্রায় ৮ শতাংশ, দুটির প্রায় ৭ শতাংশ, দুটির প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ, একটির ৬ শতাংশের বেশি, ছয়টির ৫ শতাংশের বেশি, ৯টির ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে, ৫টির ৩ থেকে ৪ শতাংশ ও ৬টির দর বেড়েছে ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে।

যে ফান্ডগুলোর দর বেড়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্তে সেগুলোর ইউনিটমূল্য আগামী কর্মদিবসে কমবে না বলে মনে করা হচ্ছে। ১০ টাকার নিচের ফান্ডগুলোর ইউনিটমূল্য সর্বোচ্চ ১০ পয়সা, ১৫ টাকার নিচেরগুলোর ২০ ও ২০ টাকার নিচেরগুলোর ৩০ পয়সা কমতে পারবে। কারণ এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা আছে ২ শতাংশ। যেহেতু শেয়ার বা ইউনিটের দর সর্বনিন্ম ১০ পয়সার হিসাব করে বাড়ানো বা কমানোর অর্ডার দেয়া যায়, তাই ২ শতাংশ কমা সম্ভব নয় সব সময়।

অন্যদিকে, বিমা খাতের শেয়ারে যেন দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। গতকাল পতনের তালিকায় বিমার শেয়ারে সয়লাব ছিল। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাধারণ বিমার ৩৯টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ৩৬টি বা ৯২ দশমিক ৩১ শতাংশ কোম্পানির। দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২টি বা ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ কোম্পানির এবং দর বেড়েছে ১টি বা ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ কোম্পানির। ডিএসইর পতনের শীর্ষ তালিকায় ১০টি কোম্পানির মধ্যে সাধারণ বিমা ছিল ৫টি। আর পতন তালিকায় থাকা ২০টি কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ১০টি।

অন্যদিকে, অন্তত ১৫টি সাধারণ বিমার শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বনি¤œ দরে অর্থাৎ দুই শতাংশের কম দরে লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রায় সব লেনদেনের শেষভাগে ক্রেতা সংকটে পড়ে হল্টেড ছিল।

গত সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে টানা চার কর্মদিবস তিন শতাধিক পয়েন্ট সূচক বাড়ার পর সোমবার ১ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট সূচক পড়লেও পরদিন তা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট। দুই কর্মদিবস পর লেনদেন আবার এক হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়েছে। সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে এক হাজার ৬৫ কোটি ৬৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৯৮৬ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

গতকাল সব মিলিয়ে ১৫১টি কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে ১৯৯টির। অপরিবর্তিত ছিল বাকি ২৯টির দর। আগের দিনের মতো লেনদেনের সাড়ে চার ঘণ্টায় সূচক ওঠানামা করেছে। তবে খুব বেশি কমেনি কখনও, বাড়েওনি সেভাবে। লেনদেন শুরু হয়েছিল ৫ পয়েন্ট বেড়ে, এক পর্যায়ে তা নেমে যায় ১৫ পয়েন্টের মতো। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২১ পয়েন্টের মতো বাড়ে বেলা পৌনে ১টায়। পরে সেখান থেকে কিছুটা কমে।

আগের কর্মদিবসের মতো সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বস্ত্র খাতে। মোট ১৬০ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে এই খাতটিতে। আগের দিন লেনদেন ছিল ১৮০ কোটি টাকার বেশি। তবে শতকরা হিসেবে লেনদেন অনেকটাই কমেছে। আগের দিন মোট লেনদেনের ২০ শতাংশের বেশি ছিল এই খাতে, এবার তা কমে হয়েছে ১৫ শতাংশের কিছু বেশি। তবে লেনদেনে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেলেও এ খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি দর হারিয়েছে। দর বেড়েছে ১৫টি কোম্পানির, কমেছে ৩৪টির। বাকি ৯টি কোম্পানির দর ছিল অপরিবর্তিত।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বিবিধ খাতে। এই খাতের ১৪টি কোম্পানিতে ১৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডের লেনদেন ছিল ১০৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও হঠাৎ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। এই খাতের ১১টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১৩০ কোটি টাকার বেশি। দাম বেড়েছে সব কোম্পানির। ১০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ওষুধ ও রসায়ন এবং প্রকৌশল খাতেও।

লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা ব্যাংক খাতে লেনদেন হয়েছে ৫৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। কমেছে বেশিরভাগ শেয়ারের দর। বেড়েছে ৮টি কোম্পানির শেয়ারদর, হারিয়েছে দ্বিগুণসংখ্যক কোম্পানির। অন্যদিকে ৯টি কোম্পানির দর ছিল অপরিবর্তিত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০