নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার অপরাধে পিএইচপি ফ্যামিলির বিরুদ্ধে সম্প্রতি মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সেই খবর চট্টগ্রামভিত্তিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশের পর পোর্টালটির উপদেষ্টা সম্পাদক ও সাংবাদিক আয়ান শর্মাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইকবাল হোসেন। এমনকি এ ব্যবসায়ী একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে তুলে আনার ভয়ও দেখান। এ ঘটনায় সাংবাদিক আয়ান শর্মাও সিএমএম আদালতে মামলা করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ের টিলা কেটে বাঁধ দিয়ে পাহাড়ি প্রাকৃতিক ছড়া বন্ধ করে দেয় পিএইচপি ফ্যামিলির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস। পরিকল্পিতভাবে ওই পাহাড়ি খাল বা ছড়ার স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করে কৃত্রিম জলাধার, যা দিয়ে তাদের আমের বাগানে পানি দেয়া হয়। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের রাস্তা ও পানি নিষ্কাশনের ছড়া ব্যবহার করতে না পেরে এলাকাবাসীও পড়ছেন ভোগান্তিতে। সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে খালের ওপর বাঁধ দিয়ে সেই পানি নিজেদের কাজে ব্যবহার করার এমন ঘটনা জেনে পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিনে অনুসন্ধান চালায়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি তদন্তকারী দল গত ৩০ জানুয়ারি ওই এলাকা পরিদর্শন করার পর ঘটনার সত্যতা পায়। এরপর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কারখানা কর্তৃপক্ষের শুনানি শেষে সাত দিনের মধ্যে বাঁধটি সরিয়ে পানির প্রবাহ সচল করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। ওই সময় ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড না করার জন্য ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা বা মুচলেকাও দেন পিএইচপির কর্মকর্তারা। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ওই সময় জানানো হয়, এই নির্দেশ অমান্য করলে পরিবেশ আইনে মামলা করা হবে পিএইচপি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই শুনানি শেষে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তা পালন করা হয়েছে কি না, সেটি দেখার জন্য নির্দেশের সাত দিন পর আবার ঘটনাস্থলে যান পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা দেখেন, পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস কারখানা কর্তৃপক্ষ পাহাড়ি প্রাকৃতিক ছড়ায় দেয়া বাঁধটি অপসারণ করেনি। পরে সেই বাঁধ না সরানোয় শেষ পর্যন্ত পিএইচপির তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলায় যেতে বাধ্য হয় পরিবেশ অধিদপ্তর।
গত ২ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানায় করা মামলায় পিএইচপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, কারখানার আমবাগান প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. আলফাতুন ও কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অভিজিৎ চক্রবর্তীকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলার বিষয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের মতো চট্টগ্রাম প্রতিদিনেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চট্টগ্রাম প্রতিদিনে নিউজ প্রকাশের জেরে উপদেষ্টা সম্পাদক ও আয়ান শর্মাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন।
এ ঘটনায় সাংবাদিক আয়ান শর্মাও সিএমএম আদালতে মামলা করেন। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, হত্যার হুমকি ও মানহানির অভিযোগে সিএমএম আদালতে মামলা করেছেন আয়ান শর্মা।
এ বিষয়ে আয়ান শর্মা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘অন্যান্য জাতীয় দৈনিকেও পিএইচপি ফ্যামিলির বিরুদ্ধে মামলার খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবর প্রকাশের চার দিন পর ৮ মার্চ রাত ২টার দিকে পিএইচপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন টেলিফোনে তাকে অকথ্য ভাষায় হুমকি দিতে শুরু করেন। টানা দুই দিন অন্তত ৪০ বার তিনি ফোন করেছেন, এসএমএস দিয়েছেন ৭৯টি। এ পর্যন্ত আমরা তার আট মিনিটের অডিও ক্লিপ প্রকাশ করেছি। ২২ মিনিটের আরেকটি ক্লিপ আছে, যেটি এতটাই অশ্রাব্য যে প্রকাশ করা সঠিক বলে মনে করছি না।’
এসব বিষয়ে জানতে পিএইচপি ফ্যামিলির জনসংযোগ কর্মকর্তা দিলশান আহম্মেদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ‘তিনি নামাজে আছেন, পরে কথা হবে’ বলে জানান। পরে তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।