সাত বছর আগে নির্মাণ শেষ হলেও চলছে প্রকল্প  

ইসমাইল আলী: চট্টগ্রামে তৃতীয় কর্ণফুলী (শাহ আমানত) সেতুর নির্মাণ শুরু হয় ২০০৩ সালে। মূল সেতুর কাজ ২০১০ সালের মাঝামাঝি শেষ হলেও প্রকল্পটি ঝুলে আছে সাত বছর। সংযোগ সড়ক না হওয়ায় প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে না। এতে প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের বেতন-ভাতা, অন্যান্য সেবা, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ও এগুলোর জ্বালানি, আসবাব কেনা ইত্যাদি খরচ প্রকল্প থেকেই নির্বাহ করা হচ্ছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়েই চলেছে।

সম্প্রতি তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু প্রকল্পটি চতুর্থবারের মতো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় বৃদ্ধির ১৭টি খাত ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ হিসাবে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৭৯৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ২০০৩ সালে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৩৯ কোটি সাত লাখ টাকা। অর্থাৎ চার দফায় সেতুটির ব্যয় বাড়ছে ৩৫৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বা ৮২ শতাংশ।

তথ্যমতে, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত করা। ২০০৩ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) এটি নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করে। মাত্র ৯৫০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে সময় লাগে সাত বছর। তবে সেতুটির জন্য নতুন সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। এর পরিবর্তে দ্বিতীয় কর্ণফুলীর সংযোগ সড়কই ব্যবহার করা হতো।

এদিকে ২০১৫ সালে সেতুটির জন্য আট কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে সেতু ও অন্য প্রান্ত থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে তিন দফা প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়। এরপর বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয় সংযোগ সড়কের। এর ভিত্তিতে প্রকল্পটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। ফলে চতুর্থ দফা ব্যয় বৃদ্ধির হিসাব করা হয়েছে।

এতে দেখা যায়, জমি অধিগ্রহণে ব্যয় বাড়ছে ২৫ কোটি ৪৯ লাখ, জমি ভাড়ায় ১ কোটি ১৪ লাখ, মাটি উন্নয়নে ৯ কোটি ৪৬ লাখ, পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে ১ কোটি ৭০ লাখ, নির্মাণকাজে ৪৮ কোটি ছয় লাখ, সেতু সম্প্রসারণে ২৪ কোটি ৪৭ লাখ, আন্ডারপাস নির্মাণে ১৪ কোটি ৬০ লাখ, ফুটপাত ও পয়োনিষ্কাশনে ৭ কোটি ২০ লাখ এবং সাইন-সিগন্যালে ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এছাড়া বেতন-ভাতা বাবদ ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণে ২৬ লাখ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ৬৩ লাখ, আসবাব কেনা বাবদ ২২ লাখ ব্যয় বাড়ছে। এর বাইরে ব্যয় ও মূল্য সমন্বয় খাতে ব্যয় বাড়ছে ৬৯ লাখ টাকা। তবে ৯টি খাতে ৯ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় কমেছে। সব মিলিয়ে চতুর্থ দফায় ব্যয় বাড়ছে ১১৬ কোট ৩৪ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান শেয়ার বিজকে বলেন, সংযোগ সড়কের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছিল। তাদের হিসাবের পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে এত দিন প্রকল্পটিতে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত ছিল না। তাই এ খাতে কোনো ব্যয় ছিল না। নতুন করে কাজ শুরু করলে সেক্ষেত্রে এসব খাতে ব্যয় বাড়াটাই স্বাভাবিক।

সূত্রমতে, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব ২০১৫ সালে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক সভায় অনুমোদন করা হয়। এতে উপস্থিত এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০১৩ সালে ৬১ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়। সে সময় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর তেমন কোনো কাজই হয়নি। ২০১৫ সালে আবারও ৩১ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। সে সময় মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। তবে এরপরও কোনো কাজ হয়নি। ফলে আবারও ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকল্পটির মেয়াদও এক-দেড় বছর বাড়াতে হবে। ফলে এটি সওজের সবচেয়ে দীর্ঘায়িত প্রকল্পে পরিণত হয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সচিব এমএএন ছিদ্দিক এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রকল্পটির কাজের পরিধি বেড়ে গেছে। এর মধ্যে একবার বিশেষ সংশোধন ছিল। তবে এবার জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এছাড়া সংযোগ সড়ক নির্মাণ ব্যয় তো রয়েছেই। শিগগিরই প্রকল্পটির প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০