সিইসিকে বিশিষ্টজনেরা নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) কাজে নিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সাহসী হতেও তাগাদা দিয়েছেন তারা। নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফেরানো, ইভিএম ব্যবহার না করা, দলীয় সরকারের সময় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করাসহ নানা পরামর্শ দিয়েছেন। একইসঙ্গে দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা এলে বর্তমান কমিশনকে প্রয়োজনে পদত্যাগের পরামর্শও দিয়েছেন তারা। গতকাল নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে দ্বিতীয় ধাপের এ সংলাপে বিভিন্ন পেশার ১৯ জন অংশ নেন।

আলোচকরা বলেছেন, ভোট ব্যবস্থাপনার প্রতি ভোটারদের আস্থা ফেরাতে হবে। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে উদ্যোগী হতে হবে। সেইসঙ্গে কমিশনকে কাজ দিয়েই প্রমাণ করতে হবে, তারা নিরপেক্ষভাবে ভোট করবেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন ইসি গঠনের পর ধারাবাহিক সংলাপ চলছে। দুই দফায় শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বসলেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। সবার মতামত পর্যালোচনা করে অংশগ্রহণমূলক ভোট করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের আশ্বাস দেন নতুন সিইসি।

ইভিএম নিয়ে বিশিষ্টজনদের পরামর্শের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ইভিএমে কোনো অসুবিধা আছে কি না; মেশিনের মাধ্যমে ভোটে কোনো ডিজিটাল কারচুপি হয় কি নাÑএটা আমাদের দেখতে হবে। অনেকে অভ্যস্ত নন। ইভিএমের প্রতি আস্থা নিয়ে কথা উঠেছে।’

তিনি বলেন, ‘ইভিএমে ভালো দিক রয়েছে, দ্রুত গণনা হয়ে যায়। কিন্তু পুনর্গণনার সমস্যা রয়েছে; ব্যালটে পুনর্গণনা করা যায়। কারিগরি কমিটির সঙ্গে মিটিং করে আমাদের ইভিএম সম্পর্কে একটা ধারণা নিতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন, সঠিক হলে তা চালিয়ে যেতে হবে। কাজে না লাগলে বর্জন করাই ভালো। এসব মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মকে যেন নির্বাচনে কোনোভাবে উপজীব্য না করা হয়। নির্বাচনে এটাকে কেউ কাজে না লাগায়, সেটা অবশ্যই আমরা দেখব।’

সংলাপে সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ইভিএমের ব্যবহার অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়। এটা থেকে দূরে থাকা ভালো। ইভিএম ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিতে পারে। ঝুঁকি নিয়ে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত নয়। ইভিএম ব্যবহার করলেই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন।’

লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ যন্ত্রে যে ম্যানুপুলেট করা যায় না, তা নিশ্চিত না করে ব্যবহার করা যাবে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন বলেন, ‘ইভিএম সব সময় বিতর্কিত। এটার সমাধান না করে ব্যবহার করা ঠিক নয়। জোরের সঙ্গে বলব, ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইভিএমের বিরোধিতা করে বলেন, ‘বিনা টেন্ডারে কীভাবে ইভিএম এলো? ইভিএম নিয়ে একজনের এত উৎসাহ কেন, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। কোনোভাবে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। চাইলে ৫-১০ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করতে পারে। তবে এটা না হওয়াই ভালো।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনাই চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনকালীন আইন-বিধির যথাযথ প্রয়োগ করতে পারেন কি না, তা দেখা যাবে। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। সাহসিতার সঙ্গে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। প্রতিবন্ধকতা এলে পদত্যাগের সাহস রাখবেন।’

লিডারশিপ স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. সিনহা এমএ সাঈদ বলেন, ‘ইসি এত সংলাপ করার মানে হচ্ছে এখানে সংকট রয়েছে। আপনার কাজ দিয়ে প্রমাণ করুন, আস্থা অর্জন করুন সবার। নির্বাচনের সময় কতটুকু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন সংশয় রয়েছে। আমি আশাবাদী মানুষ।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য আইনে কোনো পরিবর্তন করা যায় কি না, তা চিহ্নিত করেন আপনারা।’

সরকারের অনুগত না থেকে রাষ্ট্রের জন্য কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘প্রয়োজনে ইস্তফা দেবেন। সব অংশীজন, ভোটার, আমরা আপনাদের পক্ষে আছি।’

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘ভোটাররা নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছে। ইসি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অতীতের ভুলভ্রান্তি স্বীকার করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। ক্ষমতায় থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। গত দুটি নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়টি সরকার প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানান, সার্চ কমিটির কারণে বর্তমান কমিশন কিছুটা আস্থা সংকটে পড়েছে। সবার নাম প্রকাশ করেনি কমিটি। এছাড়া নূরুল হুদা কমিশনের সাবেক সচিব ও আরেক সাবেক সচিবের শ্বশুর আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় নতুন ইসির দুই সদস্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জোনায়েদ সাকি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার দলের নিবন্ধন দেয়ার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০