নিজস্ব প্রতিবেদক: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিশেষায়িত বাহিনী র্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এটি যে সহসাই উঠে যাচ্ছে না তা পরিষ্কার করে বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিষয়টি সমাধানে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্তও লাগতে পারে বলে জানালেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রও এমন ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশকে বলে সাংবাদিকদের জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের ঢাকা সফরের সময় এমন আলোচনাই হয়েছে। উনারা বলেছেন যে, এটা একটা প্রক্রিয়া, এটা একটি জটিল প্রক্রিয়া। সুতরাং মুখে বললে হবে না। তবে তারা এটা নিয়ে কাজ করবে।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত বছর ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
সে সময় ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এমন পদক্ষেপ নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। পরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে একটি লবিস্ট সংস্থাকেও নিয়োগ দেয়া হয়। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র পার্টনারশিপ ডায়ালগে যোগ দিতে আন্ডার সেক্রেটারি নুল্যান্ড গত ১৯ থেকে ২১ মার্চ ঢাকা সফরে এলে বাংলাদেশের তরফ থেকে র্যাবের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গও তোলা হয়।
গত রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নে বাইডেন প্রশাসনের ওই কর্মকর্তাও বলেছিলেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ‘জটিল ও কঠিন’। তবে এটা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে দুই দেশের সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আসছে এপ্রিলে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠকেও তিনি নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে কথা বলবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ১০ ডিসেম্বরের পরে মার্কিন প্রতিনিধি যার সঙ্গেই আলাপ হয়েছে, র্যাব ইস্যুটা এসেছে। আর সম্প্রতি মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি যিনি আসছিলেন, তার সঙ্গেও এটা নিয়ে আলাপ হয়েছে। ওনার বক্তব্য আপনারা শুনেছেন। উনি বলেছেন, গত তিন মাস র্যাবের কারণে কারও মৃত্যু হয় নাই, এসবে তারা খুশি।
তিনি বলেন, আমরা ওনাদের বলেছি, আমরা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি, যা যা নেয়ার। আমি বলতে চাই, এই প্রতিকারের ব্যবস্থাগুলো আমাদের সিস্টেমে এমনিতেই ছিল। কিন্তু অনেক সময় সেগুলো ঠিকমতো কার্যকর হয়নি। আমরা চাই সেগুলো যাতে কার্যকরী হয়। কারণ কোথাও কোনো অঘটন যদি ঘটে, তার একটা জুডিশিয়াল প্রসেস আছে আমাদের। কিন্তু সোচ্চার করে আগে অত কার্যকর করিনি, আমরা এখন সেগুলো জোরালোভাবে বলছি। আমরা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রসঙ্গও টানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র নীতিগতভাবে, আদর্শগতভাবে ‘একই বিশ্বাস’ ধারণ করে। গত ১৩ বছরে আমাদের দেশে যেভাবে স্মুথলি ডেমোক্রেসি চলছে, এটার কিন্তু নজির মাঝখানে ছিল না। যে ভোট দিতে চায়, ভোট দিতে পারে। অবৈধ ভোট যেটাকে বলে, সেটা বাদ হয়ে গেছে। ছবিযুক্ত ভোটার আইডি হয়েছে, ফলে কারচুপির পরিমাণ কমে গেছে।
আগামী ৩০ মার্চ শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পঞ্চম বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন। এতে ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনটি হাইব্রিড মোডে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের বিষয়ে জানাতে গতকাল সংবাদ সম্মেলনটি করা হয়।
এ সময় জানানো হয়, সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রতিনিধি ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত প্রতিনিধি দলটি কলম্বোয় যাবেন। এবারের সম্মেলনে বিমসটেক চার্টার বা সনদ স্বাক্ষরিত হবে। এতে বিমসটেকের কার্যপরিধি উল্লেখ করা থাকবে। প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পর বিমসটেকের চার্টার তৈরি হচ্ছে। এতে সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়বে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিমসটেকের মধ্যে মাত্র সাত শতাংশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হয়। আমরা আশা করছি, এটি এখন ২১ শতাংশে উন্নীত হবে। বিমসটেকের আওতায় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল কার্যকরকরণ, যোগাযোগ মহাপরিকল্পনা অনুমোদন, বিদ্যুৎ গ্রিড সংযুক্তকরণ, জ্বালানি সহযোগিতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন ও এসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে প্রস্তাব রয়েছে।
এতে চারটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। আন্তঃরাষ্ট্র যান চলাচল চুক্তিসহ আরেকটি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে, বিমসটেক চার্টার বা সনদ, মিউচুয়াল বেনিফিট লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স, টেকনোলজি ট্রান্সফার ও একাডেমি এক্সচেঞ্জ অর্থাৎ পেশাগত উন্নয়নে প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া।