বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাত নম্বর সেক্টর কমান্ডার কাজী নূরুজ্জামান। তিনি ১৯২৫ সালের ২৪ মার্চ যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৩ সালে অনার্স ক্লাসে অধ্যয়নকালে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মা এবং সুমাত্রায় মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে পণ্ডিত জহরলাল নেহেরুর আহ্বানে তিনি নৌবাহিনী থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চলে আসেন এবং ১৯৪৭ সালে দেরাদুনে রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন। ১৯৪৭-এর ১৫ আগস্টের পর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কাজী নূরুজ্জামান ১৯৫৬ সালে মেজর পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদে লিপ্ত হন। এ সময় তিনি লেফটেনেন্ট কর্নেল পদোন্নতি পান এবং সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। ১৯৬২ সালে তিনি ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনে (ইপিআইডিসি) যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে তিনি সেনাবাহিনীতে ফিরে যান এবং যুদ্ধ শেষে সিভিল পেশায় ফিরে আসেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে কাজী নূরুজ্জামান ২৮ মার্চ দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক কাজী সফিউল্লাহর ব্যাটালিয়নে (ময়মনসিংহ) যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ৭নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে তিনি ৭নং সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তিনি বীর-উত্তম খেতাব পান। স্বাধীনতা লাভের পরপরই তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন। আশির দশকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি ছিলেন। তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। ১৯৮৫ সালে গঠিত মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণ-আদালতের অন্যতম বিচারক ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম গঠনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কাজী নূরুজ্জামান সাপ্তাহিক নয়া পদধ্বনি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। কাজী নূরুজ্জামান একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায় গ্রন্থের অন্যতম সম্পাদক এবং ‘একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ: একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা’, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি’, ‘বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি’, ‘স্বদেশ চিন্তা’ গ্রন্থের প্রণেতা। ২০১১ সালের ৬ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা