শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারতে ইলেকট্রিক ভেহিকেলের (ইভি) চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক আন্তর্জাতিক গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোক্তারা এ ধরনের গাড়ি নির্মাণ করতে শুরু করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে প্রায় তিন হাজার ইভি চার্জিং স্টেশনের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়। খবর: মিন্ট।
কয়েক বছর ধরে ভারতের বাজারে লঞ্চ করা হচ্ছে অত্যাধুনিক মডেলের ইভি, যা দেখে অনেক মানুষ এ ধরনের গাড়ি কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বিদ্যুৎচালিত ট্রাক, ট্রাক্টর ও বাস চালু করতে আগ্রহী হচ্ছেন। এসব কারণে অতীতের তুলনায় দেশটিতে ইভি বেচাকেনা বাড়লেও চার্জিং স্টেশনের অভাবে তা গণহারে বিক্রির অবস্থায় পৌঁছায়নি। ব্যবসায়ীরাও এজন্য অপর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশনকে দায়ী করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে বৈদ্যুতিক যানবাহন ব্যবহারকারীদের জন্য খুশির খবর দিল দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
দেশটির ২৫টি রাজ্যের ৬৮ শহরে মোট দুই হাজার ৮৭৭ ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রণালয়। কেন্দ্রীয় প্রকল্প ফেম ২-এর আওতায় চলবে এই চার্জিং স্টেশনের নির্মাণকাজ।
গত বুধবার ভারতের লোকসভায় ভারী শিল্পমন্ত্রী কৃষাণ পাল গুর্জর চার্জিং স্টেশন নির্মাণের অনুমোদনের কথাটি লিখিত আকারে জানান। এছাড়া তাদের ১৬ জাতীয় সড়ক ও ৯টি এক্সপ্রেসওয়ের ধারঘেঁষে এক হাজার ৫৭৬ বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন তৈরির অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সরকারি ছাড়াও বিইই, ইইএসএল, পিজিসিআইএল ও এসটিপিসি বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে ইভি চার্জিং স্টেশন অবকাঠামো তৈরি করা হবে। দেশটির বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ও এতে সায় দিয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী, জাতীয় সড়কে প্রতি ২৫ কিলোমিটার অন্তর দুই পাশে একটি চার্জিং স্টেশন তৈরি করা হবে। বেশি রেঞ্জ অথবা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য প্রতি ১০০ কিলোমিটার দূরে দুই পাশে এই চার্জিং স্টেশনগুলো থাকবে। আর শহরাঞ্চলে প্রতি তিন কিলোমিটার অন্তর একটি চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
উল্লেখ্য, ফেম ১-এর আওতায় ভারী শিল্প মন্ত্রণালয় ৫২০টি ইভি চার্জিং স্টেশন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিল। এ জন্য খরচ হয়েছিল ৪৩ কোটি রুপি। এ ধরনের চার্জিং স্টেশন থেকে হাইব্রিড ও ইভি চার্জ দেয়া যায়।
কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের দাবি, ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪Ñএই পাঁচ বছরে বাজেটে এক হাজার কোটি রুপি বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা কেন্দ্রীয় সরকারের ফেম-২ প্রকল্পের আওতায় গড়ে তোলা হবে।
গত বছর অক্টোবর থেকে চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতের ৯টি মেগাসিটিতে ইভি চার্জিং স্টেশন আড়াই গুণ বেড়েছে। এ শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে সুরাট, পুনে, আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই ও চেন্নাই। এ সময় এসব শহরে মোট ৬৭৮ ইভি চার্জিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়। জানুয়ারিতে এক বিবৃতিতে দেশটির বিদ্যুৎমন্ত্রী রাজকুমার সিং
জানিয়েছিলেন, এসব শহরে ইভির
অবকাঠামো বাড়ানোর পর দেশের বাকি শহুরগুলোয়ও ইভি সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
চার্জিং স্টেশনের সংখ্যা বাড়ানো হলে ভোক্তাশ্রেণি এ ধরনের গাড়ি কিনতে আরও আগ্রহী হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের এ সময় বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে ইভি। জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে ও বড় শহরগুলো থেকে পরিবেশ দূষণ কমাতে ইভি তৈরিতে আগ্রহী হচ্ছে অনেক দেশ। কার্বন নিঃসরণমুক্ত ছোট গাড়ি তৈরি শুরু করেছে অনেক দেশ। এতে একটু দেরিতে হলেও শামিল হয়েছে ভারত। এরই মধ্যে দেশটি বিদেশি বিনিয়োগও পেয়েছে। সম্প্রতি জাপানের সুজুকি মোটর ভারতের গুজরাটে তাদের মারুতি সুজুকির কারখানায় ১৫০ বিলিয়ন ইয়েন বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে, ভারতীয় মুদ্রায় যা ১০ হাজার ৪৪০ কোটি রুপির বেশি। বর্তমানে ভারতের বাজারে দুই ও তিন চাকার ব্যাটারিচালিত গাড়ির চাহিদা সর্বাধিক। আর ইলেকট্রিক চার চাকার বাজারে একাধিক সংস্থার প্রিমিয়াম গাড়ি রয়েছে।